ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানববন্ধন

সহিংসতা দমনে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার দাবি ১৪ দলের

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
সহিংসতা দমনে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার দাবি ১৪ দলের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সন্ত্রাস-নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।

২০ দলের নাশকতার বিরুদ্ধে ও ‘শান্তির স্বপক্ষে’ রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আয়োজিত মানববন্ধনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা এ দাবি জানান।



এক ঘণ্টার এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ লাখো মানুষ অংশ নিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা ও নাশকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

মানববন্ধনে বিএননপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার, নাশকতা দমনের জন্য নতুন আইন, নতুন আদালত ও নতুন বাহিনী গঠনের দাবি ওঠে।

দেশব্যাপী এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাজধানী গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এ মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে এ মানববন্ধনে অংশ নেয় ক্ষমতাসীন জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কর্মসূচি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর ১৪ দল আয়োজিত এ মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বিশাল এ মানবপ্রাচীরের ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা ১৩টি স্পটে বিভক্ত হয়ে অংশ নেন। স্পটগুলো ছিলো-গাবতলী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, জাতীয় সংসদ ভবন, রাসেল স্কয়ার, বসুন্ধরা সিটি, সোনারগাঁও হোটেল, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, গুলিস্তান, ইত্তেফাক মোড় ও যাত্রাবাড়ী।

মানববন্ধন চলাকালে দেওয়া বক্তৃতায় ১৪ দলের নেতারা দাবি করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। এটা রাজনীতি নয়, এটা নাশকতা। জনগণ তার হরতাল অবরোধে সাড়া না দেওয়ায় তিনি জনগণকে প্রতিপক্ষ করেছেন।

এই নাশকতার কারণে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন ১৪ দল নেতারা। তারা নাশকতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিএনপিকেও নিষিদ্ধের দাবি জানান। সেইসঙ্গে সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান জোট নেতারা।

কর্মসূচিতে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই অংশ নেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সামনে। এখানে ১৪ দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি চেয়ারপারসন খালদা জিয়াকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের নেত্রী আখ্যায়িত করে বলেন, আপনি বোমা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আপনি জঙ্গিদের নেত্রী হয়েছেন। পয়সা (অর্থ) দিয়ে জামায়াতের ক্যাডারদের মাঠে নামিয়েছেন।

নাসিম বলেন, জনগণ খালেদা জিয়ার অবরোধ-হরতালে সারা দেয়নি। জনগণ খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেই। প্রতিটি হত্যাকান্ডের জন্য আপনার বিচার হবে।

তিনি বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না। সংলাপ হবে ২০১৯ সালে। সেই সংলাপ হবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। আর ২০১৯ সালের নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। অন্য কারও অধীনে নয়।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস নয়, পেট্রোল বোমার বিরুদ্ধে পেট্রোল বোমা নয়, নাশকতার বিরুদ্ধে নাশকতা নয়। জনগণের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের সকল রাজনীতি, গণতন্ত্র নাশকতা মোকাবেলা করেই জয়ী হয়েছে। আমাদেরও আজ সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। দেশে যেটা চলছে, সেটা কোনো রাজনৈতিক সংকট বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সংকট নয়। এটা নাশকতা। এটা সাধারণ আইন দিয়ে, সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমন করা যাবে না। এর জন্য নতুন আইন, নতুন আদালত ও বাহিনী তৈরি করতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়া হরতাল অবরোধ করে বারবার জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানালেও জনগণ তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এ কারণেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা যেভাবে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছিল, খালেদা জিয়াও সেই পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছেন। মানুষ মেরে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে তার দায় খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। এর জন্য তাকে বিচারে মুখোমুখি হতে হবে।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর যে জঘণ্য কর্মকাণ্ড খালেদা জিয়া করছেন-এটা সরকারের একার পক্ষে দমন করা সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে জনগণকেও ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে আলোচনা করে মিটমাট করতে বলেন। দানবের সঙ্গে মানবের সংলাপ হতে পারে না। তাদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে। তা না হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।  

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে এখানে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাম্যবাদী দলের দিলিপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী, আওয়ামী লীগের আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এমএ আজিজ প্রমুখ।

মানববন্ধনের রাসেল স্কয়ার থেকে ধানমন্ডি ২৭ পর্যন্ত স্পটে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, নূহ উল আলম লেনিন, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু সাইদ মাহমুদ স্বপন, অসীম কুমার উকিল, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, মাহজাবীন খালেদ, তারানা হালিম, সাবেক তথ্য কমিশনার জমির উদ্দিন প্রমুখ।

বসুন্ধরা সিটি থেকে হোটেল সোনারগাঁওয়ের মোড় পর্যন্ত স্পটে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।

জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শামসুল হক টুকু প্রমুখ।

মৎস ভবন এলকায় ১৪ দলের শান্তির স্বপক্ষের মানববন্ধনে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

**খালেদাকে ধিক্কার জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে
** গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দলের মানববন্ধন
** ‘পেট্রোল বোমা আর সহ্য করা হবে না’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।