ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে মারধর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কর্মীরা। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শামসুন নাহার হলের সভাপতি নিশীতা ইকবালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগে নদী ও সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোবারকের কর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবকে মারধর করেন এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শামসুল কবীর রাহাতকে অপদস্থ করেন।
মারধরের শিকার মাহবুব খানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রবৃত্তি উপ-সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান বিপুলকে নিয়ে রিকশায় টিএসসি থেকে শাহবাগে যাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত। রিকশা শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে পৌঁছলে তাদের গতিরোধ করেন নদীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, নদী প্রথমে রাহাতকে বলেন, ‘আপনি সাংবাদিকদের দিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট করাইছেন’। রাহাত বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাজ সাংবাদিকরা করে, আমি রিপোর্ট করাইতে যাব কেন? আর এ বিষয়ে কথা বলার জায়গা তো রাস্তা না। পার্টির কোনো ফোরামে বা মধুর ক্যান্টিনে এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ’ এ কথা বলে ওখান থেকে চলে যান রাহাত। এরপর নদী ও তার অনুসারীরা চিৎকার ও চেঁচামেচি করতে থাকেন।
এ বিষয়ে নদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ওনাকে বলেছি, আপনি সাংবাদিকদের দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়েছেন তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। তিনি তার কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। ’
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, নদীর অনুসারীদের সঙ্গে রাহাতের ঝামেলা হতে পারে এমন তথ্য পাওয়ার পর রাহাতের কয়েকজন অনুসারী শাহবাগের দিকে রওনা হন। এটা শুনে সূর্যসেন হলের নেতাকর্মীরা গিয়ে মাহবুবের ওপর হামলা করে। তাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
রাহাতের অনুসারীদের অভিযোগ, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মোবারক নিজে উপস্থিত থেকে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে মোবারক এ বিষেয়ে বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম না। ময়মনসিংহ এলাকার আমার ছোট ভাইয়েরা সেখানে গিয়ে থাকতে পারে। আমি ছিলাম প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। ’
হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় বিচার চেয়ে শামসুল কবির রাহাত বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে সংঘাতের বিষয় ফুটিয়ে তোলার জন্য এবং সংঘাতময় মুহুর্তে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের বিদেশ থাকা নিয়ে নানা সমালোচনাকে আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম দেশের বাইরে থাকায় এ ঘটনায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, মারামারির ঘটনা তিনি শুনেছেন। এ ঘটনা তদন্তের পর যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে রাত দশটার দিকে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি নিশীতা ইকবাল নদীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেন নদীর অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী ও চারুকলা ছাপচিত্র বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান সোনালী। এ খবর পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫