ঢাকা: কমে এসেছে পেট্রোল বোমার প্রকোপ। ক’দিন ধরে যাত্রীবাহী বাস আর পণ্যবাহী ট্রাকে হামলাও কমে এসেছে বেশ।
মাস দেড়েক ধরে সারাদেশে পেট্রোল বোমা আর ককটেলের যে মচ্ছব শুরু হয়েছিলো তা এখন অনেকটাই পড়তির দিকে!
তবে এটাও ঠিক, এই বোমা আর ককটেলবাজি যে ফের বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কেউই দেয়নি। দলীয় কর্মী দিয়ে হোক বা ভাড়া করা বোমাবাজ দিয়ে হোক, বীভৎসতা ছড়িয়ে জনমনে আরো আতঙ্ক তৈরির আশঙ্কা এতো সহজে যাবে না, যায়ওনি।
উপরন্তু এমন আন্দোলনে হতাহতদের এ প্রজন্মের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে ২০ দলীয় জোটনেতা বিএনপি মূলত কর্মী-সমর্থকদের নাশকতার পথেই উস্কে দিয়েছে।
তবে আশার কথা এই যে, বিএনপির সেই ঘোষণায় উব্দুদ্ধ হয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো হবু মুক্তিযোদ্ধা বড় ধরনের কোনো নাশকতা চালায়নি। অনুপ্রাণিত হয়ে রাস্তায়ও নামেনি কোনো মিছিল। দেশের কোথাও থেকে সরকার বিরোধী কোনো শোডাউনের খবর আসেনি।
টানা অবরোধের ডাক দিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটপ্রধান খালেদা জিয়া সেই যে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গ্যাঁট হয়ে বসে রইলেন, তারপর তার নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্য কর্মসূচির কথা ভুলে গেলো। মেতে উঠলো চোরাগোপ্তা হামলা আর নাশকতায়। তাদের পের্টোল বোমা পুড়লো কতো জনের হাত-পা, শরীর, কণ্ঠনালী। আর্তনাদে ভারী হলো বাংলার আকাশ।
মানবতাবিরোধী এমনসব অপরাধের দায় অস্বীকার করে সব নাশকতার দায় সরকারের ঘাড়ে চাপাতে থাকলেও রোববার দলীয় কর্মীদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কার্যত সব পেট্রোল বোমার দায়ই স্বীকার করে নিয়েছে বিএনপি।
যদিও তাদের অভিনব খেতাব দেওয়ার ঘোষণায় চাঙ্গা হওয়ার বদলে লজ্জায় রাঙা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের গাল। এই এক ঘোষণাতেই আন্দোলনের তেজ হারিয়ে সবাই যেনো মুখ লুকোনোর জায়গা খুঁজছেন। তাই বেদখলই থাকলো রাজপথ।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে প্রধান চরিত্র সেটাই যেনো পালটে দেওয়া হলো বেমালুম। জনগণ নির্ভরতার বদলে নাশকতা নির্ভর সরকার বিরোধী তৎপরতা প্রবল হলো। গোপন স্থান থেকে এসে ঝটিকা নাশকতা চালিয়ে ফের দা ঢাকা দিতে দেখা গেলো ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের। আসতে থাকলো অজ্ঞাত স্থান থেকে কড়া কড়া ভাষার সব বিবৃতি।
রাজপথে তবু বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা গেলো না। দশকের পর দশক ধরে হরতাল ডেকে সড়ক দখলে রাখার যে চল এই বাংলাদেশে এতো দিন চালু ছিলো, তাও যেনো পছন্দ হলো না খালেদা জিয়ার। তাই সরকারের পতন ঘটাতে রাজপথে তার কোনো নেতাকর্মী এলো না। হলো না মিছিল-মিটিং। আকাশ কাঁপলো না স্লোগানে স্লোগানে।
খুব শিগগিরই যে নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামবেন তারও কোনো খবর দিতে পারছে না বিভিন্ন ঘটনায় নাস্তানাবুদ বিএনপি। তবে দলীয় সূত্র বলছে, শেষ শক্তি থাকা পর্যন্ত সরকারকে চাপে ফেলার জন্য যা দরকার করবে তারা। তারা জানে হাজারো মানুষ জমায়েতের চেয়ে একটি পেট্রোল বোমা অনেক বেশি জনঅস্থিরতা তৈরির ক্ষমতা রাখে।
তবে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মী নিহত ও আহত হওয়ার পর আগের মতো এখন আর কেউ নিতে চাচ্ছেন না জীবনের ঝুঁকি। তারওপর তৈরি হয়েছে গণপিটুনির ভয়। বিএনপির অধিকাংশ কর্মী সমর্থকও চাইছেন এসব ছেড়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদের পথে হাঁটতে। তাহলে কি পেট্রোল বোমার অপসংস্কৃতি সত্যি সত্যিই মিইয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে চূড়ান্তভাবে বিএনপি কি ভাববে বলা মুশকিল। তবে এভাবে নাশকতা চালিয়ে আর যাই হোক, জনগণের মন যে পাওয়া যাবে না সেটা খালেদা জিয়া যতো দ্রুত উপলব্ধি করতে পারেন ততোই মঙ্গল।
তাই মানবিক প্রত্যাশা, পেট্রোল বোমা ফাটানোর হিড়িকে যে ভাটার টান পড়েছে তা অব্যাহত থাক। আর একটাও পেট্রোল বোমা না ফাটুক কোথাও। যে জনগণকে নিয়ে এতো কথা, সেই জনগণকে সম্পৃক্ত করেই ফিরে আসুক সুস্থ রাজনীতির ধারা। রাজপথে আর বোমাবাজি নয়, জনগণই অংশ নিক সব জনকর্মসূচিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫