খালেদার কার্যালয় এলাকা থেকে: সদ্য জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রভাব বুঝারই জো নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় এলাকায়। ভেতরে যে অর্ধশতাধিক মানুষ আছে তাও বুঝা যাবে না বাইরে থেকে।
একটু জোর বাতাস এলেই ঝরঝর হলদেটে পাতা ঝরে কার্যালয়ের উত্তর-পূর্ব কোন লাগোয়া মাঝবয়সী মেহগনি গাছ থেকে। প্রধান ফটকের পকেট গেটে দাঁড়ানো দুই নিরাপত্তার কর্মীর চোখ অব্যক্ত বেদনায় লালচে হয়ে আছে। তাদের ঘাড়ের ওপর দিয়ে নজরে এলো ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ স্লোগান লেখা লাল পোস্টার। মাঝখানটাতে নি:সঙ্গ ধানের শীষ। গেটের ওপাশে দলীয় পতাকাটা বিবর্ণ। তার আড়ালে যেনো চাপা পড়ে আছে, আটকেপড়াদের আকুতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন ভেতরে আটকে পড়া মানুষগুলো। এদের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও আছেন চেয়ারপারসন’স সিকিউরিটি ফোর্স ও মিডিয়া উইং সদস্য, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত স্টাফ। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা পঞ্চাশের ওপরে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর তাদের অধিকাংশই অস্থির হয়ে উঠেছেন বলেই জানিয়েছেন যার যার স্বজনকে।
এদের সামনে এখন দুটি ব্যাখ্যা- খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে, নয়তো তার কার্যালয়কেই সাবজেল ঘোষণা করা হবে। তবে এর যেটাই হোক, তাদের নিজেদের কি হবে সেটা অনিশ্চিত। কারাবাসের ব্যাপারে ভীষণ আপত্তি আছে এই কর্মীদলের।
এমনিতেই এরা সবাই এক বাড়িতে আটকা আছেন মাস দু’য়েক হতে চললো। এরপর জেল ঘোষণা হলে ফের কবে খোলা জীবন আসে কে জানে! আর এ কারণে খুব কম জনই এখন থাকতে চাইছেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এক্ষেত্রে সবাই একসাথে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন তারা।
অন্যদিকে নেতারা তাদের বুঝাচ্ছেন, এটা খালেদা জিয়াকে চাপে রাখার একটা কৌশল মাত্র। তাকে গ্রেফতার করা এতো সহজ হবে না। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু এই অভয় বাণীতে যে কাজ হচ্ছে না তার প্রমাণ দিতেই যেনো পূর্ব দিকের দোতলাজোড়া জানালা গলে এক অফিস স্টাফ মুখ বাড়ালেন বাইরে। ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি ফের জানালা টেনে ভেতরের আঁধারে হারিয়ে গেলেন তিনি।
এ দিকের বাউন্ডারি ঘেঁষে ক’জন পুলিশ বসে আছেন চেয়ার পেতে। এমন পোশাকি পুলিশ গোটা চত্বরে খুব বেশি দেখা গেলো না। বরং ছড়িয়ে ছিটিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। আর আছেন মিডিয়া কর্মী । রাস্তার এপার থেকে ট্রাইপডের ওপর একসারি ক্যামেরা তাক করে রাখা কার্যালয়ের ফটক বরাবর। যেনো কোনো আয়োজনই ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে না যায়।
ক্যামেরা সারির উপরে কালো রঙের ব্যানারে ঝুলছে গত দেড় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৫৪ জনের নামের তালিকা। সংস্কৃতি কর্মীদের টানিয়ে যাওয়া। ‘আর কত লাশ চান খালেদা’ স্লোগান লেখা ব্যানারটি যেনো নীরবে ব্যঙ্গ করছে বিএনপি প্রধানের কার্যালয়ের দিকে মুখ তুলে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়টির হোল্ডিং নাম্বার ৬। ৮৬ নম্বর রোডের দোতলা এ বাড়িটির পশ্চিম ঘেঁষে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৬/এ নম্বরের বাড়িটি। আর খালেদার কার্যালয়ের পূর্বপাশ ঘেঁষে আর একটা রাস্তা এগিয়ে গেছে লেক বরাবর।
বিএনপি প্রধানের কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় থাই ভিসা প্রসেসিং অফিসে ভিড় নেই। খালেদার বাড়ি ডানে রেখে এদিকটায় এলে মাত্র দু’টো বাড়ি পরই গুলশান লেক। বসন্তের হাওয়া এখানে বাধাহীন। লেকের বাঁধানো পাড় ধরে চলাচলকারী মানুষগুলোর কোনো আগ্রহ দেখা গেলো না খালেদা জিয়াকে নিয়ে।
পুরো এলাকায় তাই মূলত সাদা পোশাকের গোয়েন্দা আর মিডিয়া কর্মীরাই আছেন। আধাআধি ব্যারিকেড থাকলেও ৮৬ নম্বর সড়কে যান চলাচল বন্ধ নয়। মাঝেমধ্যেই হইহল্লা করে এ পথে যাচ্ছে স্কুলছাত্রদের দল। চারটি বিদেশি কুকুর ছানা নিয়ে সামনে দিয়ে পার হয়ে গেলেন দুই নারী। কার্যালয়ের বিপরীতে উদ্যানে কলেজ পালানো যুগল।
পাবলিক বাসের গিজগিজে ভিঁড়, গাঁও-গেরামের জটলা আর শহুরে চায়ের আড্ডায় খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার ছিঁটেফোটাও নেই এখানে। আছে কেবল অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত কি হয় কে জানে!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫