গুলশান কার্যালয় থেকে: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তার ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন সাইদ ও বড়বোন সেলিমা ইসলাম। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবরে যথারীতি খালেদার পাশে রয়েছেন তার এ দুই আত্মীয়া।
খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুসংবাদ, খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বড় ছেলে তারেক রহমানকে ৪ মার্চের মধ্যে হাজিরের নির্দেশসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর সর্বপ্রথম নাসরিনই জানিয়েছেন খালেদাকে।
বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবরেই শুধু নয়, খালেদার বিপদের সময়গুলোতে বেশ কিছুদিন ধরেই পাশে রয়েছেন তারা।
৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে বাইরের খোঁজ-খবর জানানো, মানসিক শক্তির যোগান দেওয়া- প্রভৃতি ভূমিকা পালন করছেন এই দুই নারী।
তাদের ঘনিষ্ঠরা জানান, স্বামী মেজর (অব.) সাইদ ইস্কান্দার বেঁচে না থাকলেও ‘ননাস’ খালেদার প্রতি দায়িত্ব পালনে এতটুকু গাফিলতি নেই নাসরিনের। আর রাজনীতি থেকে বরাবরই দূরে থাকা সেলিমাও বিপদের সময়ে পাশে রয়েছেন ছোটবোনের।
খালেদার জীবনের অন্যরকম এ সময়টিতে প্রতি মুহূর্তে পাশে রয়েছেন তারা। সেটি শুধুমাত্র কার্যালয়ে অবস্থানের ভিত্তিতে নয়, মানসিক সহযোগিতার মাধ্যমেও।
তাদের ঘনিষ্ঠরা আরও জানিয়েছেন, নিজেদের বাসায় ভালো খাবার তৈরি হলে তারা নিয়ে আসতে চান খালেদার জন্য। প্রতিরাতে দেখে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাকে।
নাসরিন এ যাবৎ বেশ কয়েকরাত ছিলেনও গুলশান কার্যালয়ে। ঢাকা মেট্রো-চ- ৫৩৩৭২০ নম্বর গাড়িটি সন্ধ্যার পর আসে এবং রাতে ফিরে যায়। যেদিন খাবার আসে, সেদিন গাড়িচালক মো. আকরাম সেগুলো ফটকের ভেতরে পাঠান। সেলিমার সঙ্গে মাঝে মাঝে তার পুত্রবধূও আসেন খালাশ্বাশুড়িকে দেখতে।
অন্যদের প্রবেশ-প্রস্থানে বাধা থাকলেও, এ দুজন আত্মীয়দের ক্ষেত্রে বাধা দেন না ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। বরং বেশ ভদ্র আচরণ করা হয় তাদের সঙ্গে- জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
খালেদার পরিবারের কাছের মানুষরা জানান, নাসরিনের বারিধারার বাসা ও সেলিমার গুলশানের বাসায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নেই ৩ জানুয়ারি থেকেই। এই দুই নারী টেলিভিশন ও পত্রিকার খবরগুলো নিয়মিত ফলো করছেন, টক-শোগুলোর আলোচনার সারমর্ম জানাচ্ছেন খালেদাকে।
এছাড়া আত্মীয়-পরিজনদের খোঁজও খালেদা পাচ্ছেন নাসরিন ও সেলিমার কাছ থেকে।
গুলশান সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া কার্যালয়ের দোতলায় একটি কক্ষে একাকী কাটান দিনের বেশিরভাগ সময়। তবে সন্ধ্যার পরে বোন ও ভাইবধূর অপেক্ষা করেন তিনি। একে একে তারা আসেন, খালেদাকেও কিছুটা আনন্দিত দেখায়।
কথা ও খাওয়া শেষে কার্যালয়ের গেটের একদম কাছ ঘেঁষে আসে গাড়ি, ফিরে যান নাসরিন ও সেলিমা। এটি মোটামুটি প্রতিদিনেরই চিত্র।
উপস্থিত ফটো-সাংবাদিকরা এগিয়ে যান ছবি নিতে। কাপড়ে মুখ ঢাকেন নাসরিন, সেলিমাও দ্রুত ও নিরবে গাড়িতে চড়েন।
ঘনিষ্ঠরা জানান, নাসরিন ও সেলিমা উভয়ই জানেন যে, তারা নজরবন্দি রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর। তবু ঝুঁকি নিচ্ছেন, পাশে থাকছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আত্মীয়া খালেদা জিয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫