ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

আত্মসমর্পণ করবেন না খালেদা

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
আত্মসমর্পণ করবেন না খালেদা ছবি: জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হলেও সেপথ মাড়াবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে এবারও আদালতে যাবেন না তিনি, করবেন না আত্মসমর্পণ।


 
খালেদা জিয়‍ার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
 
তারা মনে করছেন, হুট করেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দিকে যাবে না প্রশাসন। বরং একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে তাকে, যাতে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণে যেতে পারেন।
 
এমন পরিস্থিতিতে খালেদার করণীয় জানতে চাইলে তার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমরা দেখবো সরকার কী করে। তারা যদি আত্মসমর্পণের কথা বলে ও সময় বেঁধে দেয় সেক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না। কারণ নিরাপত্তার অভাব স্পষ্ট।
 
আহমেদ আজম বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু তিনি নিরাপত্তার অভাবে আদালতে হাজির হতে পারেন নি। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এখন আত্মসমর্পণের কথা বলা হলে সেটিও একই কারণে সম্ভব হবে না।
 
আজম বলেন, নিরাপত্তার অভাবে আদালতে হাজিরা দিতে যেতে পারেন নি খালেদা জিয়া, আত্মসমর্পণে কীভাবে যাবেন?
 
এই আইনজীবী আরও বলেন, যদি বিশেষ বিবেচনায় খালেদা জিয়ার পরিবর্তে তার ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ’কে এই সুযোগটি দেওয়া হয়, তাহলে ভিন্ন ব্যাপার। তার পক্ষে আদালতে যাওয়া যাবে। কিন্তু সরাসরি তিনি যেতে পারবেন না।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অপর এক আইনজীবী বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া আইন মেনে চলেন। কিন্তু সরকার আইনের অপব্যবহার করছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তারা হেনস্থা করা ও দেশকে বিরোধীদল মুক্ত করার উদ্দেশ্যে এসব করছে। তাই সরকারের কথামতো খালেদা চলবেন না। আত্মসমর্পণের প্রশ্নই আসে না।
 
বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা মিডিয়াকে এসব বললেও নিজেদের ভেতরের আলোচনা কিন্তু অন্যরকম চালাচ্ছেন। সরকার কী কী করতে পারে, সেসব ভেবে রেখে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে চান তারা।
 
বুধবার সেই লক্ষ্যেই সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের বাসায় বৈঠক করেন কয়েকজন আইনজীবী।
 
বৈঠকসূত্র জানায়, খালেদা আত্মসমর্পণ করবেন কিনা, না করলে সরকার কী করবে, কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে খালেদাকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা কতটুকু- ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেন তারা।
 
এছাড়া খালেদার অবর্তমানে কে দলের কাজ চালিয়ে নেবে- সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে।
 
বৈঠকে উপস্থিত এক প্রবীণ আইনজীবী নিজের ইচ্ছাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন খালেদা জিয়া যেভাবে আছেন, গ্রেপ্তারের পর সেভাবেই রাখলে ভালো হয়। বিশেষ করে তার সঙ্গে এখন যারা আছে, তারাসহ যদি থাকে, ম্যাডামের (খালেদা) জন্য ভালো। তিনি অসুস্থ মানুষ, তাকে সম্পূর্ণ একা রাখা এই বয়সে- সেটা খুব খারাপ ও অমানবিক হবে।
 
আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আত্মসমর্পণের প্রশ্নই আসে না। নিজ কার্যালয়ে এভাবেই থাকবেন এবং সামনেই অসহযোগের ডাক দেবেন ম্যাডাম(খালেদা)। এরপর সরকার কী করবে? অসহযোগের ভয়েইতো চাপে রাখতে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা।
 
এই নেতা আরও বলেন, ‘ম্যাডাম বলেছেন, তিনি সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত রয়েছেন। এই সরকার তার সঙ্গে কোন প্রকার ন্যায় করবেন- সেটা তিনি আশা করেন না। কারণ এই সরকার ন্যায় করতে জানে না। ’
 
সূত্রের দাবি, বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরে সিনিয়র এক নেতা খালেদার কাছে পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চান। জবাবে খালেদা তাকে বলেন, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ আগে দেখুন। তাদের পদক্ষেপের ওপরই আমাদেরটা নির্ভর করবে।
 
খালেদার সঙ্গে তার কার্যালয়ে বাসরত একজন বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার রাতে বোন সেলিমা ও ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে খালেদার।
 
এক পর্যায়ে খালেদাকে বলতে শোনা যায়, আইনকে আমি সম্মান করি। কিন্তু ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকার যা করছে, তাদের মনোবাসনা কখনোই পূরণ হবে না। দেশের মানুষকে তারা বোকা ভাবে, এটা ঠিক না। মানুষ বোকা না, তারা সব বোঝে, তারা আমাকে চেনে। তোমরা কোন চিন্তা করো না।
 
গুলশান সূত্র জানায়, পরোয়ানা জারির খবরে তেমন কোনো উদ্বেগ খালেদার মধ্যে দেখা যায়নি। ছোটভাই সাইদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিনের কাছ থেকে খবরটি প্রথম পান তিনি।
 
নাসরিন বেশ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন বলে খালেদা উল্টো তাকে সান্ত্বনা দেন। বলেন, ভয় পেও না। চিন্তা করো না।
 
এরপর কার্যালয়ের কয়েকজন স্টাফ খালেদার কক্ষের সামনে যান। তাদেরও তিনি বলেন, ‘তোমরা কি ভয় পাচ্ছ? কেন? দেশের জন্য রাজনীতি করি, সরকারের এসব কাণ্ডে ভয় পেলে চলবে?’
 
এদিকে পরোয়ানা জারির পর থেকেই গুলশানে সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনাগোনা ও মনোযোগ বেড়েছে।
 
পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে গুঞ্জন রয়েছে- থানায় পৌঁছেছে পরোয়ানা। কিন্তু মিডিয়ার কাছে তারা স্বীকার করছেন না জটিলতা ও পরবর্তী প্রশ্ন এড়াতে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ