ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

আন্দোলনে না থাকলেও না.গঞ্জে ‘ভাড়ায়’ খাটে বিএনপি ‘ক্যাডাররা!’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
আন্দোলনে না থাকলেও না.গঞ্জে ‘ভাড়ায়’ খাটে বিএনপি ‘ক্যাডাররা!’

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের অনেক স্থানে বিএনপির পদ ও পদবি ব্যবহার করে সুযোগ-সুবিধা নিলেও বিভিন্নস্থানে জমি দখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভাড়ায় খাটছে এসব নেতা, যাদেরকে অনেকেই ‘ক্যাডার’ হিসেবেই জানেন।

সম্প্রতি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে এসব নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের দেখা মিলছে নানান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।

প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে জমি দখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যেমন দেখা মিলছে, তেমনি বিভিন্ন সময় ফটোসেশনের রাজনীতিতেও অগ্রগামী থাকছেন তারা। এ ছাড়া শিবির ক্যাডাররাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এম সার্কাস এলাকাতে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে বস্তিবাসীদের ওপর ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ হামলা চালানো হয়। ওই হামলার নেতৃত্ব যাদের হাতে ছিল, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য।

এরা বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে থাকলেও সাম্প্রতিক আন্দোলনে তাদের কোথাও দেখা মেলেনি। তবে মাঝে-মধ্যে তাদের ফটোসেশনের রাজনীতিতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার বস্তিবাসীদের ওপর হামলার নেতৃত্বে ছিলেন মূলত মনির হোসেন, যিনি নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কোনো পদ নেই।

অপরজন অহিদুল ইসলাম খান ছক্কু যিনি নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। বিগত দিনে ডাকাতি ও একজন ডাকাত সর্দারকে মদদ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিকবার র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে তিনি আটক হন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নারায়ণগঞ্জ ড্রেজারসহ বেশ কয়েকটি সেক্টর দখল ও বিগত বিএনপি সরকারের আমলে শহরের বরফকল মাঠে গরুর হাটে গুলি ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে দুর্ধর্ষ এ ছক্কুর বিরুদ্ধে, যাকে সবাই বিএনপির ‘ক্যাডার’ হিসেবেই জানেন।

তবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন এ ছক্কুকে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের সামনের সড়কে রাস্তায় ফেলে নির্যাতন করা হয়। সেটাকে পুঁজি করে তিনি পরবর্তী বিএনপি সরকারের আমলে ফায়দা লুটেছেন। নগর বিএনপি ও ১১নং ওয়ার্ড কমিটির দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছক্কু।

এ বিষয়ে অহিদুল হক খান ছক্কু বলেন, জমি দখল বিষয়টা তো দলীয় বিষয় না। সেটা আমার ভাইয়ের জমি। আমরা তো সেখানে যাবোই। আর আমি সেখানে গেলেও মারামারি করতে যাইনি। আমার এখনকার লেবাস নিয়ে মারামারি করতে পারবো, বলেন?

তিনি বলেন, আমি দলীয় বিক্ষোভ, মিছিল, সভা-সমাবেশে সব সময় থাকি। কিন্তু ভাঙচুর করতে পারবো না। আমি এ সবে নেই।

হামলার সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন- সারোয়ার মুজাহিদ মুকুল, মো. ইসলেহ উদ্দিন ইছা, বদরুল আলম বাদল; যারা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঠিকাদারি ব্যবসা করেছেন। বর্তমানেও তারা ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত আছেন।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিল ছক্কুর সহযোগী বিএনপি ক্যাডার মো. আরিফ আলম দিপু।

হামলার সময়ে নেতৃত্বে ছিলেন শিবির ক্যাডার তানভীরও। স্থানীয় অনেকে তাকে ‘মোল্লা তানভীর’ নামেই চেনেন। ওই তানভীরকেও লাঠিসোটা নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে গেছে। তানভীরের নেতৃত্বে অপরিচিত অনেকেই ছিলেন, যারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শীদের।  

হামলার নেতৃত্বে আরো একজন ছিলেন। তার নাম আলমগীর হোসেন ওরফে কাইল্লা আলমগীর। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ‘নদীখেকো’ উপাধি পাওয়া বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনের একান্ত সহযোগী ছিলেন। এ আলমগীরের বিরুদ্ধে ওই সময়েই সরকারি জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি ছিলেন ‘তল্লা এলাকার ত্রাস’। তার ছোটভাই মিঠু ‘তেল চুরির ব্যবসার’ সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

হামলার ঘটনায় ফটো সাংবাদিকদের তোলা ছবিতে সাইফুল ইসলাম আপন নামে ছাত্রদলের এক নেতাকে হাতে রড নিয়ে মহড়া ও বসতঘরে ভাঙচুর চালাতে দেখা যায়। হামলার সময়ে যুবক শ্রেণির লোকজনদের আপনই সংগঠিত করেছিলেন জানা গেছে।

আপনকে সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের কমিটির সভাপতির হিসেবে ঘোষণা করেছিল তার ‘বস’ মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল। তবে অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় ওই কমিটি ঘোষণা করায় সেটা পরে সজলই আবার বাতিল করতে বাধ্য হন।

উল্লেখ্য, দিনের বেলায় আপন ‘সন্ত্রাসী’ কায়দায় হামলা চালালেও রাতেই সংবাদমাধ্যমে পাঠানো নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের এক প্রতিবাদ লিপিতে প্রতিবাদকারী হিসেবে মনিরুল ইসলাম সজল এর নামের পাশে সাইফুল ইসলাম আপনের নামও যুক্ত ছিল।

বৃহস্পতিবারের হামলার সময়ে আপন ছাড়াও সজল ও শাহেদ অনুগামী কয়েকজন কর্মীকে লাঠিসোটা হাতে দেখা গেছে, যারা এর আগে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের মিছিলেও ছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার হামলার সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের লোকজনদের পাশাপাশি যুবলীগেরও অনেক লোকজন ছিলেন। তবে সরকার বিতর্কিত হতে পারে এমন কারণে ক্ষমতাসীনদের তুলনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের লোকজনদের উপস্থিতির আধিক্য ছিল বেশি।

সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলেও গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দখলের উদ্দেশ্যে একদল ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী’ হামলা চালায়, যেখানে মঞ্জু হোসেন নামে একজন যুবদল নেতাকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। মঞ্জু সিদ্ধিরগঞ্জের ১০নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলে বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফা হামলার নেতৃত্ব দেওয়াসহ লোকজনদের ওপর হামলারও অনেক অভিযোগ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদ গত কয়েক বছর ধরেই শহরের জিমখানা এলাকার একটি গরুর হাটের ইজারা পেয়ে যাচ্ছেন। সরকারি দলের লোকজনদের সঙ্গে আঁতাত করেই এ হাট ইজারা তিনি পেলেও আয়ের একটি বড় অংশ তাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন অভিযোগ করেন, সকালে একটি সাদা রঙয়ের প্রাইভেটকার ও খোলা ট্রাকে করে মূলত লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র আনা হয়। হামলাকারীরা আগে থেকে জড়ো থাকলেও এসব অস্ত্র আনার পরেই সেগুলো হাতে নিয়ে হামলা শুরু হয়। হামলাকারীরা এতটাই আগ্রাসী ছিল যে, সাতজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর বই-খাতা ছিঁড়ে ফেলে দেয়।

ছাত্রদল নেতারাও এ ন্যাক্কারজনক কাজটি করতে পিছপা হননি। শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কয়েকজন নারীকেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।