ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিতে হাইকোর্টে আবেদন খালেদার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৫
গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিতে হাইকোর্টে আবেদন খালেদার

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আদালত পরিবর্তনে আবেদনের সম্পূরক হিসেবে এ আবেদনটি করা হয়েছে।



আদালত পরিবর্তনে খালেদার আবেদন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দিন ধার্য রয়েছে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের জানান, একই দিনে সম্পূরক আবেদনটিরও শুনানি করবেন তারা। তিনি জানান, আবেদনে দুর্নীতি মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। এ রুল বিচারাধীন থাকাকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়েছি আমরা।   

এসব আবেদনের কপি রাষ্ট্রপক্ষকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।   

গত ২৮ জানুয়ারি আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। সোমবার (০২ মার্চ) এ আবেদনের শুনানির দিন ৫ মার্চ ধার্য করে দেন আদালত।


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অন্য দু’জন হচ্ছেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

এদিকে মঙ্গলবারই গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারে বিচারিক আদালতে আবেদন জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। বুধবার এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ওই আবেদন জানালে শুনানির এ দিন ধার্য করে দিয়েছেন আদালত।

বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এর আগে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানকেও বুধবার আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ছয় আসামির অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এর আগে দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বুধবার আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে সোমবার বাংলানিউজকে জানান অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। তবে হাইকোর্টে বিচারিক আদালত পরিবর্তনের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য ওইদিন আবেদন জানানো হবে বলেও জানান খালেদার আইনজীবীরা।

অন্যদিকে জামিন সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে খালেদার এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনো আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে।

তিনিও বিচারিক আদালতের প্রতি তাদের অনাস্থার আবেদন জানানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, এখানে দু’টি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে, বিচারিক আদালতের প্রতি আমরা অনাস্থার আবেদন জানিয়েছি। ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত আইনগতভাবে ও নৈতিকতার দিক থেকে এ মামলার শুনানি করতে পারেন না। কারণ, তার বিপক্ষে তো আমরা অনাস্থা দিয়েছি। তার তো নৈতিকতার দিক আছে যে, আমার বিপক্ষে অনাস্থার আবেদন দিয়েছে, দেখি উচ্চ আদালত কি বলেন।

আরেকটি ব্যাপার হলো, গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো খালেদা জিয়া হাতে পাননি। কিন্তু তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৬ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন। কোনো আসামিই আদালতে না থাকায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরাও বাতিল করেছেন আদালত।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে। আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারক বদল করা হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৫

** ‘কার্যালয়ে ফেরার আশ্বাস পেলে আদালতে যাবেন খালেদা’
** খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন, শুনানি বুধবার
** গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন খালেদার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।