ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

নেগেটিভ ভোটে মেয়র চায় জাপা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫
নেগেটিভ ভোটে মেয়র চায় জাপা

ঢাকা: ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে সরকারের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভাবকে (নেগেটিভ ভোট) কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি। তাই আসন্ন নির্বাচনে কোমর কষেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।



দলীয় সূত্র বলছে, এ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় থাকলেও ডিসিসি দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ও হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
 
আর ডিসিসি উত্তরে বাহাউদ্দিন বাবুল অথবা তৈয়ব আলীকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
 
দলীয় নেতাদের ধারণা, নানা কারণে এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই তারা বিকল্প খুঁজছে। আর সেই বিকল্প হিসেবে নিজেদের যোগ্য ভাবছে জাতীয় পার্টি।

এক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থকরা ছাড়াও সরকারের প্রতি যাদের নেতিবাচক তারা জাতীয় পার্টিকেই ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।  
 
দলের সিনিয়র এক নেতা বাংলানিউজকে জানান, বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সরকার দলীয় লোকজনের নানা অপকর্মের কারণে জনগণ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ কারণে সরকার বিরোধীরাই ক্ষমতায় এসেছে বারবার। ডিসিসি নির্বাচনেও এই প্রভাব পড়বে।
 
দলটির নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন থেকে বিরত খাকতেও পারে। এমন হলে বিএনপি সমর্থকরা জাপার প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। এতে করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জাপার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীরা গোপনে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। যাতে বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের সমর্থন আদায় করা সহজ হয়।
 
ডিসিসি দক্ষিণে দু’জনের নাম আলোচিত হলেও অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে সবচেয়ে জনপ্রিয় মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।
 
খিলগাঁও থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জমির আলী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান দলের ‘পরীক্ষিত’ নেতা হিসেবে পরিচিত। দলের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে। দল এবং দলের চেয়ারম্যানের বিপদের দিনে অনেকে দল ছেড়ে গেলেও তিনি (দেলোয়ার হোসেন) পাশে থেকেছেন।

তিনি বলেন, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানের দলমত নির্বিশেষে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি প্রার্থী হলে অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থকও তাকে ভোট দেবেন।
 
১৯৯০ সালে থেকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান খিলগাঁও-সবুজবাগ এলাকার (ঢাকা-৯) আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এ কারণে এলাকায় তিনি অনেক পুরনো মুখ। এসব দিক বিবেচনায় দেলোয়ার হোসেনকে উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।
 
খিলগাঁও থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল বাসার বাসু বাংলানিউজকে জানান, নেতাকর্মীরা দেলোয়ার হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের বাসায় ভিড় করছেন।
 
সবুজবাগ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে জানান, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে ‍জাতীয় পার্টির সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করছি। আশা করছি পার্টির চেয়ারম্যান মাঠ পর্যায়ের কথা বিবেচনা করে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবেন।
 
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেক নেতাই এরশাদকে ছেড়ে রওশন এরশাদের সঙ্গী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরের দিনই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন দেলোয়ার হোসেন খান।
 
ওই নির্বাচনের সময় আমরা কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন খানের নির্দেশে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে গেছি।

যে কারণে নেতাকর্মীরা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে এরশাদের আদর্শের সৈনিক মনে করেন বলে মন্তব্য করেন আব্দুল কাইয়ুম।
 
খিলগাঁও এলাকা ঘুরে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের দেওয়াল লিখন ও পোস্টার দেখা গেছে। তবে সেগুলোতে ডিসিসি নির্বাচনের সম্পর্কে কোনো কথা নেই। অধিকাংশ পোস্টারেই এরশাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও জাতীয় পার্টিতে যোগদানের আহ্বানের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
 
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক নেতারই লক্ষ্য থাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। গত সংসদ নির্বাচনে অনেক প্রস্তুতি থাকলেও পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশে নির্বাচন বর্জন করেছি।
 
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেবো’।
 
দক্ষিণে জাপার মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। তিনি আগে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডিয়ামের সদস্য হয়েছেন। পুরান ঢাকায় তার কিছু সমর্থক রয়েছেন। তবে পুরো নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কিছুটা ব্যবধান রয়েছে। যে কারণে নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন করছেন না।
 
আগের দফায় ডিসিসির নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হলে ডিসিসি উত্তরে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন এরশাদ। এবারও তার নাম জোরেসোরেই আলোচিত হচ্ছে। তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তৈয়ব আলীর নাম।
 
সৈয়দ তৈয়ব আলী আগে জাতীয় পার্টি করতেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দল থেকে বের হয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করলে তার দলে ভেড়েন। তিনি গোপনে এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে।
 
এ ছাড়া বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের’র পুত্র এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।
 
উত্তর ডিসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বাহাউদ্দিন বাবুল বাংলানিউজকে জানান, পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে চান তাই সময় নিচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেই জোরালোভাবে মাঠে নামব।
 
‌এর বাইরে আরেকটি সমীকরণ হল বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝতা হতে পারে জাপার। এমনটি হলে যেকোন একটি মেয়র চাইবে জাপা।
 
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, প্রার্থী এখনও চুড়ান্ত হয়নি তবে অনেকেই মেয়র পদে প্রার্থী হতে চান। তফশিল ঘোষণা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪. ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।