ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ঐক্য’ ধরা খাওয়ায় বন্ধ ‘সমাজ’র নড়াচড়া

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
‘ঐক্য’ ধরা খাওয়ায় বন্ধ ‘সমাজ’র নড়াচড়া ড. কামাল হোসেন, এটিএম শামসুল হুদা, মাহমুদুর রহমান মান্না

ঢাকা: ফোনালাপ ফাঁসের জেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ধরা পড়ার পর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসাতে নাগরিক সমাজ যে উদ্যোগ নিয়েছিলো বর্তমানে তা থেমে আছে।

এ নিয়ে আর কোনো নড়াচড়া করছে না সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নাগরিক সমাজ।


 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাগরিক সমাজের অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, নানা ব্যাস্ততার কারণে আমরা আর বসতে পারিনি। আমাদের অনেকেই দেশের বাইরে আছেন, তারা ফিরলে আবার আমরা বসবো।
 
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বিভিন্ন  শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়।

সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্যের আলোকে ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ‘জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবের আলোকে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দেওয়া হয়।
 
সূত্র জানায়, ‘নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে ৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সভায় সূচনা বক্তব্যটাও দেন তিনি।
 
অন্যদিকে সভায় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সেনা অভ্যুত্থানে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
 
দু’টি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকা এই দুই ব্যক্তির ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সব মহলেরই আপত্তি ছিলো শুরু থেকেই।
 
ফলে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম আন্তর্র্জাতিক একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখনকার উদ্যোগে এটিএম শামসুল হুদা ছাড়া সবার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। ’’
 
সূত্র জানায়, শুধু ড. কামাল হোসেন আর মাহমুদুর রহমান মান্না নন, রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার পরও সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জিএস মোস্তাক হোসেনসহ নাগরিক ফোরামের ব্যানারে জড়ো হওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তির খোলামেলা রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় নানা মহল থেকেই এ উদ্যোগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
 
এ বিতর্কের রেশ না কাটতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মাহমুমুদর রহমান মান্নার আপত্তিকর ফোনালাপের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ওই ফোনালাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলানোর পরামর্শসহ নাগরিক ঐক্য’র মিটিংয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতির বিষয়টিও মাহমুদুর রহমান মান্নার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে।
 
এরই প্রেক্ষিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডির স্টার কাবাব এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহমুদুর রহমান মান্না।
 
এর পরই মূলত, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নেওয়া ‘জাতীয় সংলাপের’ উদ্যোগ মাঝ পথে এসেই হোঁচট খায়। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠির দেওয়ার পর প্রায় একমাস হতে চললেও বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। এ নিয়ে কোনো নড়াচড়াও করছে না নাগরিক সমাজ!
 
এ প্রসঙ্গে এম হাফিজউদ্দিন খান বাংলানিজকে বলেন, আমাদের তো তেমন কিছু করার নেই। অনড় অবস্থানে থাকা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসানোর ব্যাপারে আমরা জাস্ট রিকোয়েস্ট করেছিলাম। আবার হয়তো রিকোয়েস্ট করবো। এ ব্যাপারে বরং আপনারা (মিডিয়া) আপনাদের লেখনির মাধ্যমে জনমত তৈরি করতে পারেন। আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই একটু চেষ্টা করে দেখতে পারি।
 
সূত্র জানায়, শুধু রাজনৈতিক পরিচয় আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে নয়, নাগরিক সমাজের ব্যানারে জড়ো হওয়া ‘তথাকথিত’ সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির ব্যাপারেও আপত্তি ছিলো কোনো কোনো মহলের।
 
সুশীল সমাজের ওইসব প্রতিনিধির কারও বিরুদ্ধে ওয়ান ইলেভেনের ‘কুশিলব’, কারও বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির প্রতি অতিমাত্রায় ‘দুর্বলতা’, কারও বিরুদ্ধে এনজিও করে টাকা-পয়সা কামানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগও রয়েছে।
 
এ ছাড়া কেউ কেউ মানবাধিকারের কথা বলে গুম-খুনের শিকার হওয়া স্বজনদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে কান্না-কাটি করলেও পেট্রোলবোমায় হতাহতদের স্বজনদের ব্যাপারে কোনো কথা না বলায় তাদের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো।
 
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের কতিপয় বিতর্কিত ব্যক্তির ‍উপস্থিতি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো ‘সুযোগ সন্ধানী’ রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতার কারণেই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নেওয়া ‘জাতীয় সংলাপের’ উদ্যোগ’ মাঠে মারা গেছে।
 
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক সমাজের একজন উদ্যোক্তা বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি আমরা যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম, সেখানে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবসহ রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা নাগরিক সমাজের সঙ্গে নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।