ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইশারার অপেক্ষায় রয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচির প্রশ্নে নতুন কোনো নির্দেশ দেননি তিনি।
সংশ্লিষ্টরা অবশ্য এও বলছেন, শনিবার বিকেলের মধ্যেই ৭২ ঘণ্টা হরতালের ঘোষণা আসবে। যথারীতি এই ৭২ ঘণ্টা হরতালের শেষের দিকে আবার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা আসবে এবং শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে।
শনিবার (০৭ মার্চ) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে নিজেদের হতাশা ও অপ্রস্তুতির তথ্য দিলেন একাধিক সিনিয়র নেতাও। যেখানে মার্চের শুরুতেই অসহযোগের প্রস্তুতি রাখতে তৃণমূলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে চলতি কর্মসূচি নিয়েই তৃপ্তির সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (০৬ মার্চ) দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে যথারীতি একটি বিবৃতি আসে। কিন্তু তাতে কিছু হুমকি-ধমকি পাওয়া গেলেও, কোনো কর্মসূচি পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর বিএনপি থেকেও একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে মিছিলের ছবি সংযুক্ত করে দেখানো হয়েছে, সংগঠনের সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেলে বেইলী রোডে একটি মিছিল হয়েছে।
একই দিন বিএনপি সমর্থিত সংগঠন ড্যাবও একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে সরকার ও মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন শনিবারের একটি কর্মসূচি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
বিজ্ঞপ্তিগুলোতে দলের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
কর্মসূচি নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ সুস্পষ্টভাবে নেতারা জানাতে পারলেন না। আলাপে ধরা পড়ে, তাদের মনোবল সেরকম চাঙ্গা নেই। চলমান হরতাল-অবরোধের তেমন প্রভাব দেখছেন না বলেই কিছুটা হতাশ রয়েছেন বলেও কেউ কেউ সরলভাবে স্বীকার করেন।
দলের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে এখনো কিছু জানেন না বললেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান।
শনিবার সকালে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখনো কিছু জানানো হয়নি। সালাউদ্দিন আহমেদ নিশ্চয়ই সময়মতো জানিয়ে দেবেন। আসলে ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ সেভাবে হচ্ছে না বলে তথ্য-প্রাপ্তিতে কিছুটা বিচ্ছিন্ন রয়েছি আমরা।
ঢাকা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মার্চে অসহযোগ আসবে বলে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতেই। কিন্তু এরপর খালেদা জিয়ার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও তার কার্যালয় তল্লাশির ঘটনায় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
‘এখন অসহযোগের অবস্থা নেই’- বলেন এই নেতা। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধেরই যে অবস্থা দেখছি, তাতে অসহযোগ দিলে লজ্জায় পড়তে হবে। নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছে প্রশাসন, নড়াচড়ার অবস্থা নেই।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে তাও যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করে, কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়। কিন্তু ঢাকায় পরিস্থিতি পুরোই প্রতিকূলে। মিডিয়া, প্রশাসন- সবার নজরবন্দি থাকতে হচ্ছে আমাদের।
মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনে অভিজ্ঞ এই নেতা আরও বলেন, ম্যাডাম (খালেদা), বড় নেতারা একপ্রকার আমাদের চোখের আড়ালেই রয়েছেন। তাদের দেখি না, কথা শুনতে পাই না, একটা উৎসাহ-উদ্দীপনারও দরকার হয় আন্দোলনে। সেটা পাচ্ছে না কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র অপর নেতা বাংলানিউজকে বলেন, কর্মসূচি একদম যে পালিত হচ্ছে না- তা বলা যাবে না। কিন্তু সরকার প্রতিদিনই চালাকি করছে। একের পর এক ইস্যু তৈরি করে মিডিয়া ও অন্য সবার নজর সেদিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, অসহযোগ বা অন্যকিছু দেওয়া হলেও, সরকারের চালাকির মাত্রাও পাল্লা দিয়ে সেরকম হবে। ফলে কর্মসূচি ‘ফেইল’ করেছে বলে আপনারাই লিখবেন।
৩ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কূটনীতিকদের সাক্ষাতের প্রভাব কর্মসূচি নির্ধারণে পড়েছে বলেও তার বক্তব্যে ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, সরকার স্বীকার না করলেও কূটনীতিকরা দেখছেন, দেশে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে। তাই এসব কূটনীতিক একটি সমাধানে আসতে দুই পক্ষের কাছেই যাচ্ছেন। দেশের স্বার্থে আমরা ইতিবাচক থাকলেও সরকার পক্ষ জনগণের কথা ভাবছে না। এখনো নির্বাচনের ওয়াদা পূরণের লক্ষণ দেখাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কর্মসূচি দিতে হচ্ছে আমাদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫