ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে না গিয়ে মানুষ হত্যা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (০৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খুনির যে শাস্তি হয় খালেদা জিয়ারও সেই শাস্তি হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতে না গিয়ে মানুষ মারবেন, এটা সহ্য করা হবে না। আমরা এটা বরদাস্ত করবো না। এটা সময়ের ব্যাপার। খালেদা জিয়া শুধু দুর্নীতি মামলা নয়, আজ তার বিরুদ্ধে খুনের মামলাও দেওয়া হয়েছে। হুকুমের আসামি তিনি। একজন খুনির যে শাস্তি হয় তাকেও সে শাস্তি পেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ খালেদা জিয়া একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমরা ধৈর্য ধরছি, মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া হরতাল অবরোধ দিচ্ছেন, মানুষ মানছে না। তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের নেত্রী। জঙ্গিনেত্রীর কথা মানুষ মানবে না। লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী-জঙ্গি বাহিনী দিয়ে বাংলার মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবেন না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অনেক আশা ছিলো তিনি বোমা মারবেন, মানুষ খুন করবেন, কখনো কেউ এসে তাকে ক্ষমতায় বসাবে। কেউ আসে না। এতদিন আশা ছিলো, বিদেশ থেকে কেউ এসে ওনাকে একেবারে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।
তারাও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ এখানে কখনো গ্রহণযোগ্য না। তারা মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বলেছে। এখন আছে কয়েকজন সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী নিয়ে উনি ক্ষমতায় যাবেন? সন্ত্রাসী নিয়ে ওনার আন্দোলন সফল করবেন? বাংলাদেশের মানুষ এখন সজাগ। বাংলাদেশের মানুষকে আজ জেগে উঠেছে, বলেন শেখ হাসিনা।
সবাইকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবাইকে বলবো, সম্মিলিতভাবে এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সবাই রুখে দাঁড়ালে জঙ্গিনেত্রীর স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তার বিচার হবেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অপহরণে বিএনপি নেত্রীর ছেলে (তারেক রহমান) এফবিআইকে ঘুষ দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এফবিআই সদস্যদের ঘুষ দিয়ে জয়কে অপহরণ করবে, ক্ষতি করবে- সে পরিকল্পনা তারা করেছিলো। বিষয়টি আমেরিকার হাতে ধরা পড়েছে। জাসাসের এক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সে ধরা খেয়ে আমেরিকার কোর্টে শাস্তি পেয়েছে। এরপর খালেদা জিয়া কী জবাব দেবেন?
খালেদা জিয়া কোন অপরাধে এদেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, উনি অফিসে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। তিনি প্রত্যেক জেলায় নেতাদের ফোন করে কথা বলছেন, তাদের হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন। যারা বোমা মারছে, মানুষ মারছে, তারা প্রত্যেকে হয় ছাত্রদল, না হয় বিএনপি, না হয় শিবির, না হয় যুবদলের। এদের মানুষ চেনে।
অনেকে এটা ঢাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটা ঢাকার বিষয় নয়। যারা তাদের ঢাকার চেষ্টা করবে, রক্ষা করার চেষ্টা করবে তারাও সমান দোষে দোষী হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
অপরাধ করে কেউ পার পাবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, যে দেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা কষ্ট করে গেছেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, যে দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, গুলি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করা, এদেশের মানুষকে হত্যা করা আমরা বরদাস্ত করবো না।
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের রক্ত নিয়ে যারা খেলছে তাদের শাস্তি বাংলার মাটিতে হবেই হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো ক্ষমা নেই। যারা বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে তারা জঙ্গি। জঙ্গিদের আর্ন্তজাতিকভাবে যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, সেই শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা রয়েছে। এতিমদের নামে বিদেশ থেকে যে টাকা এনেছিলেন, সেই টাকা লুটপাট করে খেয়েছেন। এ মামলা আমার দেয়া না। ওনার আনা মঈন উদ্দিন-ফখরুউদ্দিন মামলা দিয়েছিলো। মামলার ৬৭ বার তারিখ পড়েছে। উনি গিয়েছেন মাত্র সাত দিন। শেষের দিন গেলেন লাঠিসোটা, গাড়ি বহর নিয়ে। উনি কোর্টে যেতে ভয় পান। ওনার সততা-আত্মবিশ্বাস থাকলে ভয় কীসের? উনি নিজেই জানেন, যে মামলা চলছে তাতে শাস্তি অবধারিত। কারণ চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।
দুপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে দোয়েল চত্বর, টিএসসি, জাতীয় জাদুঘরের সামনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
জনসভাকে ঘিরে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউনও করতে দেখা যায়।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।
** আ’লীগের সমাবেশ শুরু
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫/ আপডেট ২৩১৫