ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশিতে কোনরকম তাড়াহুড়ো নেই পুলিশের। বরং বিষয়টিকে ‘সংবেদনশীল’ বিবেচনায় সময় নিচ্ছেন তারা।
তারা জানাচ্ছেন, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশির বিষয়টিকে ‘সংবেদনশীল’ গণ্য করছেন। তাই হুটহাট কার্যালয়ে অভিযানে যাওয়া যৌক্তিক বা জরুরি মনে করছেন না তারা।
এছাড়া পরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে বলেও এই অপেক্ষা- জানান কেউ কেউ।
কর্মকর্তারা এও বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নির্দেশটি পালনে চূড়ান্ত নির্দেশনার এই অপেক্ষা সেই প্রথমদিন থেকেই।
শুধু তল্লাশি নয়, খালেদাকে গ্রেপ্তারেও কোনরকম তাগাদা দেওয়া হয়নি তাদের- জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান জোন পুলিশের এক কর্মকর্তা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের বিষয়গুলো আগে সমাধা হয়ে আসুক, তারপর বোঝা যাবে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা। তল্লাশি নিয়েও আমরা নিজ থেকে উৎসাহী নই।
প্রসঙ্গত, খালেদার বিরুদ্ধে ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ১ মার্চ তার কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ জারি হয়।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি বলে জানান গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নুরুল আলম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো পৌঁছেনি। আগে পরোয়ানা আসুক, এরপরে সিদ্ধান্ত, দিনক্ষণ বা প্রস্তুতির বিষয়টি ঠিক হবে।
তবে কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশটি গুলশান থানায় অল্প সময়ের ব্যবধানেই পৌঁছেছে। যেকোনো মুহূর্তে তল্লাশি হতে পারে ভেবে সবার দৃষ্টি ছিল গুলশান থানা ও খালেদার গুলশান কার্যালয়ের দিকে। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওমুখো হয়নি পুলিশ।
নুরুল আলম বলেন, তল্লাশির নির্দেশ থানায় পৌঁছেছে সময়মতোই। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
অপর কর্মকর্তা বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সাধারণভাবে দেখার সুযোগ নেই এই নির্দেশ। আইনের চোখে সবাই সমান- এটি যেমন সত্যি, তেমনি খালেদা জিয়াকে হুটহাট গ্রেপ্তার করা বা তার কার্যালয়ে তল্লাশির বিষয়টির আগে-পরের অবস্থাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব চিন্তা করেই আমরা চূড়ান্ত উদ্যোগে যাওয়ার আগে সরকারের গ্রীণ-সিগনালের অপেক্ষা করবো।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। উচ্চ পর্যায় থেকে আদালতের নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তবে দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি তল্লাশির।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বিস্ফোরক আইনে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। গুলশান থানা পুলিশকে তল্লাশির নির্দেশ দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মাসুদ জামানের আদালত। এতে প্রধান ও হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়ার আরও ১৩ জনের নাম রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি তদন্ত ফিরোজ কবির আদালতে তল্লাশির আবেদন শুনানিতে বলেন, আসামিরা কার্যালয়ে পালিয়ে আছেন। নাশকতার কাজে ব্যবহার হতে পারে এ ধরনের বিস্ফোরক বা অন্যসব দ্রব্য সেখানে মজুদ থাকতে পারে। তাই তল্লাশি প্রয়োজন।
এর প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তারা এই নির্দেশকে আইন পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ কার্যালয়ে তল্লাশির দাবি জানান ১৮ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ নির্দেশ জারির আগে। কিন্তু ১ মার্চ নির্দেশটি এলে এ নিয়ে সেভাবে উচ্চবাচ্য করেন নি। দলটির অন্য নেতারা তল্লাশি নিয়ে বাড়াবাড়িতে যাননি।
তবে নানাদিকের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, সেটিও সুস্পষ্টভাবে নয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আইন আইনের গতিতে চলে, সময় হলেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে।
যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিএনপি চেযারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফও।
তাদের কেউই সময়সীমা নিয়ে কথা বলেন নি, আদালতের দোহাই দিয়েছেন অন্যরাও।
এদিকে এসব বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতার প্রায় একই রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। তারা বলছেন, গ্রেপ্তারে প্রস্তুত রয়েছেন খালেদা। তিনি উদ্বিগ্ন নন।
এদিকে তল্লাশি প্রসঙ্গেও তাদের উৎকণ্ঠা নেই বলে জানান। বিএনপিপন্থি বেশ কয়েকজন আইনজীবী বাংলানিউজকে বলেন, তল্লাশি নিয়ে তারা চিন্তিত নন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কার্যালয়ে প্রবেশের সময় পুলিশের তল্লাশি হবে এবং এটাই নিয়ম। অবৈধ কিছু নিয়ে কেউ ঢুকে খালেদা জিয়ার নামে অপবাদ দেবে- এমনটি হবে না।
তবে তল্লাশির বিষয়টিতে সরকার আগ্রহী থাকবে না বলেও মত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগে সরকার নিন্দিত হবে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় তারা তল্লাশির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৫