ঢাকা: অতীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় পার্টি এখনও টিকে আছে মন্তব্য করে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সোমবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান পার্টির চেয়ারম্যান।
এরশাদ বলেন, তোমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তোমরা সাহায্য করবে। হারি জিতি নাহি লাজ, তোমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও। নির্যাতনেও নির্বাচন করেছি। নির্বাচন করেছি বলেই জাতীয় পর্টি বেঁচে আছে।
১২ বছর পর এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে জানিয়ে এরশাদ বলেন, আগামীতে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারবো। জাতীয় পার্টি জেগে উঠেছে। প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে কেউ দমায়ে রাখতে পারবে না। আমাদের পথে কোনো বাধা মানবো না, সব বাধা ভেঙে এগিয়ে যাবো।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছে, জাতীয় পার্টির কথা কেউ কোনো দিন ভুলে যাবে না। জাতীয় পার্টির কথা চিরজীবন মনে রাখবে।
আমরা হরতাল-ধংসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, আমরা মানুষকে ভালোবাসতে চাই, ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাই। তোমরা নিজেদের গড়ে তোল, এক দিন না একদিন মানুষ বুঝতে পারবে, আমাদের পাশে দাঁড়াবে। জাতীয় পার্টির হাতকে শক্তিশালী করবে।
বর্তমান ছাত্র রাজনীতির সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, এখন ছাত্র রাজনীতি মানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, ছাত্ররা ছাত্রদের হত্যা করে, শিক্ষকদের হত্যা করে। শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত নয়, সন্ত্রাসযুক্ত। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশটা পচে গেছে। এর পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন হবেই। সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়বো, দেশকে ভালোবাসবো।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, তোমাদের কাছে জাতি অনেক কিছু আশা করে। তোমাদের ১৬ কোটি মানুষকে উদ্ধার করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন অস্ত্রমুক্ত করতে হবে। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না, ভাইকে হত্যায় বিশ্বাস করি না। ছাত্রদের জ্ঞান অর্জন করে সুন্দরভাবে সমাজ ও দেশ গড়ার আহবান জানান এরশাদ।
ছাত্ররা লেখাপড়া শেষ করে প্রতি বছর ২৭ লাখ বেরিয়ে এলেও মাত্র এক লাখের কর্মসংস্থান হয় জানিয়ে এরশাদ বলেন, আজকে কাজ নেই, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এভাবে দেশ কীভাবে উন্নত হতে পারে? এভাবে দেশ কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে?
মাদকাসক্তির সমালোচনাও করেন এরশাদ। তিনি বলেন, আজ দেখলাম, ৫০ লাখ মাদকাসক্ত, তার মধ্যে ২৫ লাখ ইয়াবাসেবী। ৫০ লাখ ট্যাবলেট একদিনে সাবাড় হচ্ছে। অতলে তলিয়ে যাচ্ছে, অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। এটা ক্ষমতার রাজনীতি, তিন মাস স্কুল কলেজ বন্ধ। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা হবে কি না- এভাবে রাজনীতি চলতে পারে না। তোমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।
এরশাদ বলেন, আমি চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি, শেষ পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি স্থগিত করেছিলাম। এখন মনে হয়, কলঙ্কিত সমাজকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের টার্গেট জ্ঞানার্জন করা, যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা, মানুষ হওয়া।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সাল চিশতী, জাতীয় যুব সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির ছাত্র বিষয়ক সমন্বয়কারী শাহ-ই-আজম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ মো. ইফতেখার আহসান হাসান। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫