ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

একক কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫
একক কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ

ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে একক কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অথচ প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ৪/৫ জন করে প্রার্থী হয়ে বসে আছেন।

শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত মেনে একক প্রার্থীর পক্ষে সবাই একযোগে কাজ না করলে তা হবে দলের জন্য বুমেরাং হবে। এতে করে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের জয় পাওয়াটাই হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। এমনটাই মনে করছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সিনিয়র নেতারা।
 
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকাসহ দেশের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৯ মার্চ রোববার ছিলো এজন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই দলের ৪/৫ জন করে, আবার কোনো কোনো ওয়ার্ডে ৭/৮ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আগামী ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তাই এই সময়ের মধ্যে দলসমর্থিত একজনকে রেখে বাকিদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়ে দেওয়ার জোর চেষ্টা চলেছে।

একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ-- এই দুই সিটি করপোরেশনের ১৫টি কমিটি (সংসদীয় এলাকা ধরে) গঠন করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় এমপি ও ঢাকা মহানগরের নেতারা এই কমিটিতে রয়েছেন। এই কমিটিগুলো ধারাবাহিক বৈঠকও করে যাচ্ছে। ৩০ মার্চ সোমবার বিকেলেও আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এই কমিটির বৈঠক হয়েছে।
 
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলসমর্থিত একক প্রার্থী দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেন। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের দয়িত্ব দেন।

এর পর গত ২৫ মার্চ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই নির্দেশ দেন। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

এ বিষয়ে দলসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আওয়ামী লীগের অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন। এলাকার জনগণের মধ্যে কাজ করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই এরকম নেতাকর্মী অনেক আছেন। দল যেমন তাদের কাছে প্রত্যাশা করে, তাদেরও দলের কাছে প্রত্যাশা আছে। এদের ভেতর থেকেই আমাদের প্রার্থী নির্ধারণ করার চেষ্টা চলছে।

এলাকায় জনপ্রিয়তা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় পদ, কর্মদক্ষতা, পূর্বে কাউন্সিলর ছিলেন কিনা, শারীরিক অবস্থা---এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই দলীয় প্রার্থী বাছাই ও সমর্থন দেয়ার চেষ্টা চলছে।

একক প্রার্থী দিতে না পারলে নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে আনা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দল প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী দিলে আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৪/৫ জন করে প্রার্থী থাকলে আমাদের প্রত্যেকেই পরাজিত হবে--- এটাই স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে যে,  আমাদের অনৈক্যের এই সুযোগ নিয়ে এমনকি বোমাবাজরাও নির্বাচিত হয়ে যেতে পারে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমাদের দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন আমরা তাদেরকে এই আশঙ্কার দিকটি বোঝানোর চেষ্টা করছি। দলের সমর্থনের বাইরে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বসিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে ও হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ওয়ার্ড পর্যায়েরঅনেক নেতাকর্মী নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমরা যতই বলি না কেন বাস্তবে ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। তারপরও চেষ্টা চলছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সিটি নির্বাচনে একক কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণে দায়িত্ব প্রাপ্তদের একজন সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানের কাছে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। গত ৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকা শহরের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরাও এই উন্নয়নের সহযোগী। দীর্ঘ দিন তারা মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাদের অনেকেই নির্বাচনে আগ্রহী। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই বেশ ক’জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা প্রতি ওয়ার্ডে একজনকে সমর্থন দিয়ে বাকিদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে, অনুরোধ করে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।