বাকৃবি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়াদ ইবনে মোমতাজ সাদ হত্যার আসামিরা রয়েছে ধরা-ছোয়ার বাইরে।
দেশব্যাপী তুমুল আলোচিত এ ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ধরা পড়েনি চার্জশিটভুক্ত আসামিদের কেউ।
গত বছরের ৩১ মার্চ অনুষদীয় সহ সভাপতি নির্বাচন ও ক্লাশ পরীক্ষার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহপাঠী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেদম পিটুনির শিকার হন সাদ। পরে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে (ট্রমা সেন্টার) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনার জের ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাকৃবি। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
পরে পুলিশ সাদ হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ১৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু এর পরে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও আসামিদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে, আসামি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও ক্যাম্পাসছাড়া হয়েছেন সাদ হত্যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতা।
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন আন্দোলনকারী একাধিক নেতা। এছাড়া প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির মধ্যে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন অন্যান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সাদ হত্যায় জড়িত অভিযোগে গত বছরের ৯ এপ্রিল বাকৃবির জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের ৩ কর্মীকে আজীবন, ২ জনকে ৪ বছর এবং ১ জনকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ১৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
ওই বছরের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ থেকে আসামি বহিষ্কৃত ছাত্র সুজয় কুমার কুন্ডু ও রোকনুজ্জামান রোকনকে গ্রেফতার করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে ১৭ এপ্রিল গাইবান্ধার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় অপর আসামি বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী অন্তর চৌধুরী।
কিন্তু গ্রেফতারের কিছুদিন পরেই তারা সবাই জামিনে মুক্তি পান। আর ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় অপর বহিষ্কৃত ৩ আসামি রেজাউল করিম রেজা, নাজমুল শাহাদাত রাসেল ও দেওয়ান মোহাম্মদ মোন্তাকা মুফরাত।
সাদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দুই মাসব্যাপী আন্দোলনের ফলে প্রায় ৬ মাসের সেশন জটে পড়ে বাকৃবি।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠন করা সম্পূরক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উপাচার্য বরাবর প্রদান করা হলেও তা আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
দ্রুত বিচার না হওয়ায় এবং অভিযুক্তরা জামিনে থাকায় ন্যাযবিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সাদের বড়ভাই মুয়াজ ইবনে মোমতাজ বাংলানিউজকে বলেন, চার্জশিট দেওয়ার পরেও আদালতে মামলাটির কার্যক্রম থেমে থাকায় আমরা হতাশ ও শঙ্কিত। আদৌ সাদ হত্যার বিচার শেষ হবে কিনা জানি না।
সাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্র ইউনিয়নের সহ সম্পাদক কাজল সরেন বলেন, অবিলম্বে সম্পূরক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। আমরা সাদ হত্যার বিচার চাই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি সংসদের সহ সভাপতি রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, সাদ হত্যায় জড়িত সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।
তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নয় তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িত দাবি করে বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খাঁন বাবু বলেন, সাদ হত্যার প্রকৃত আসামিদের এখনও সনাক্ত করা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫