ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

মান্নান মারুফ, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫
প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

ঢাকা:  আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর  ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে এখন আর বিএনপি সমর্থিত কোনো প্রার্থী নেই। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে একাধিক প্রার্থী।

এমন পরিস্থিতিতে তাই স্বভাবতই বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।

কেননা মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল এবং বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক থাকলেও তারা কেউই সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত নন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ঘনিষ্ঠ একজন বাংলানিউজকে জানান, মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলেও এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আপিলের রায়ে তার মনোনয়নপত্র বহাল থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অংশে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পরে ওই অংশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. এসএম আসাদুজ্জামান রিপন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ক্ষেত্রে দু’জনের কেউই কাউকে ছ‍াড় দিতে রাজী নন বলে জানিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এমনিতেই গত ৫ জানুয়ারি থেকে গ্রেফতার এবং মামলায় জর্জরিত জোটের নেতাকর্মীরা। এদের অধিকাংশই এখনও রয়েছেন আত্মগোপনে। প্রার্থী নিয়ে তাই ভালোই বেকায়দায় আছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখন ম্যাডামের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি, তিনি নির্দেশ দিলেই মাঠে নেমে পড়বো।

অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য গ্রেফতার হওয়া দলীয় কর্মীদের জামিন করাতে মির্জা আব্বাস আদালতে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র।

কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন আবহ সৃষ্টি হওয়ার পরে কর্মীদের মনে যে উৎসাহের জোয়ার বইছিল, দলীয় কোন্দলে সে জোয়ারে ভাটা পড়েছে।

আত্মগোপনে থাকা মধ্যম সারির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে আসার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে সুযোগও যেন বন্ধ হয়ে গেলো।

তাদের মতে, গ্রেফতার আতঙ্কে যোগাযোগহীনতাই এ জন্য ‍দায়ী। বর্তমান সরকারের দমন-নির্যাতনের ভয়ে নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় খালেদা জিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে।

একইসঙ্গে বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালামও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সালামের ঘনিষ্ঠ একজন বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কট্টর অবস্থানে রয়েছেন সালাম। এর আগেও তিনি ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাদেক হোসেন খোকা পদত্যাগ করার পর থেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

তখন থেকেই বিভিন্ন সড়কে তার পোস্টার ও ব্যনার দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, আব্দুস সালাম বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মী এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। নেত্রী সমর্থন দিলে শিগগিরই তিনি প্রকাশ্যে আসবেন।

দলীয় এ সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। তবে এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে নেত্রীই সিদ্ধান্ত দেবেন।

মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আলোচনা শেষে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার ছেলে তারিথ আউয়াল, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী, মো. শামছুল আলম চৌধুরী, চৌধুরী ইরাদ আহমদ চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল ক্কাফী, ববি হাজ্জাজ, এ ওয়াই এম কামরুল হাসান, বাহাউদ্দিন আহমেদ, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মো. নাঈম হাসান, মো. আনিসুজ্জামান খোকন, মো. জামান ভূঞা, শেখ শহিদুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সম্বনয়ক মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ও মোস্তফা কামাল আজাদী।

বুধবার (১ এপ্রিল) বাছাই পর্বে আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও নাঈম হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
 
দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ২৬ জন মেয়র প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দেন।

এরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. এসএম আসাদুজ্জামান রিপন, অর্থনৈতিক সম্পদক আব্দুস সালাম, আক্তারুজ্জামান আয়াতুল্লাহ, আব্দুল খালেক, জাহিদুর রহমান, আবু নাসের মো. নাসের হোসাইন, বাহারানে সুলতান বাহার, এএসএম আকরাম, শাহিন খান, দিলীপ ভদ্র, শহিদুল ইসলাম, বাবুল সর্দার চাখারী, শফিউল্লাহ চৌধুরী, নাসির উদ্দীন আহমদ (পিন্টু), আব্দুর রহমান, মো. সাইফুদ্দীন, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রিয়াজউদ্দীন, মশিউর রহমান, ইমতিয়াজ আলম, গোলাম মওলা রনি, রেজাউল করিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আইয়্যুব হোসেন ও কাজী আবুল বাশার।

এদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, বাবুল সরদার চাখারী ও রেজাউল করিমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।