ঢাকা: আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি হয়রানি বন্ধ এবং দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনও চেয়েছে দলটি।
বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ সাংবাদিকদের এ সব কথা জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, এএসএম আব্দুল হালিম, সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুর রশিদ সরকার ও সাবেক যুগ্ম সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে সিইসিকে দলের তরফ থেকে কতগুলো পয়েন্ট দিয়েছি। স্থানীয সরকার নির্বাচন হলেও সব দল সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরাও অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। পল্টনের অফিস, চেয়ারপার্সনের অফিস বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি দল অফিস খুলে রাখবে এটা হতে পারে না। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। আর এর অন্যতম হলো অবাধে এবং সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড করতে পারা। তাই দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে বলেছি। ’
হান্নান শাহ বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ করেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেন না হয় সে ব্যবস্থা নিতেও বলেছি। এছাড়া পোলিং অফিসার যেন বিশেষ দলের কর্মীরা না হয় এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয় সে দাবিও জানিয়েছি।
জমির উদ্দীন সরকার বলেন, প্রশাসন নির্বাচনের সময় কমিশনের কথা শুনবে এটা সংবিধানেই বলা আছে। ‘পার্টি অফিস পল্টন, পার্টি অফিস গুলশান, এটা পরিষ্কার করে বলেছি যে, ফান্ডামেন্টাল রাইট টু এন্টার এনিহয়ার। রাইট আছে পুলিশের কিন্তু স্পেসিফাই করা হয় নাই। ‘
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন এজাহার করে নাম দেয় ১০টা লোকের, অজ্ঞাতনামা ২ হাজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ অজ্ঞাতনামা দুই হাজার যদি নির্বাচনের সময় ধরে বেড়ায় তাহলে তো আর ইলেকশন হয় না। কাজেই পুলিশ যাতে এরকম কাজ না করতে পারে ইসিকে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ’
জমির উদ্দীন সরকার বলেন, কোনো লোক যদি জামিনে থাকে এবং ধরে নিয়ে গিয়ে যদি বলে তার জামিন সম্পর্কে জানি না, তবে তো আর হবে না। যতক্ষণ কেউ গিলটি না হবে ততক্ষণ পুলিশ কাউকে ধরতে পারবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিইসি বলেছেন ম্যাজিস্ট্রেট দেবে, ভালো কর্মকর্তা দেবে, সৎ অফিসার দেবে। এছাড়া আগামী ১৯ তারিখের আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে আলোচনা করে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি জানাতে চেয়েছেন। তিনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য মোটামুটিভাবে আশ্বস্ত করেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হান্নান শাহ বলেন, আমাদের প্রার্থীরা যেন ভোটারদের কাছে যেতে পারে এবং প্রচারণা চালাতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। কেননা, প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না যেতে পারলে ভোট কি করে হবে?
প্রিন্টিং মিসেটেক বা করণিক ভুলের জন্য আমাদের প্রার্থী মিন্টু ও পিন্টুর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। সিইসি আশ্বস্ত করেছেন নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করলে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেবেন বিষয়টি। যাতে নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
এছাড়া বিএনপির প্রতিনিধি দল সিইসির কাছে একটি লিখিত চিঠিতে ৫টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ইসির স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তবে এতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কোনোকিছু উল্লেখ নেই।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের অনেককেই নিরুৎসাহিত করার জন্য মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা তারা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন। এসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রকাশ্যে ও নিরাপদে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ইসি কি ব্যবস্থা নেবে ?
যারা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য দায়িত্ব পাবে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে নির্বিঘ্নে অংশ নিতে ইসির পদক্ষেপ কী হবে ?
অন্য প্রার্থী ও প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবে কমিশন ?
এছাড়া পেশীশক্তির প্রয়োগ রোধ এবং পোলিং এজেন্টদের জীবন ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিশনের ব্যবস্থা কি হবে তাও স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলটি সিইসির সঙ্গে বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দেড়ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫
** সিইসির কাছে সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপি প্রতিনিধি দলের