ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের তিন ‘বৈধ’ মেয়রপ্রার্থীর মধ্য থেকে মির্জা আব্বাসকেই মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
অন্য দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে মির্জা আব্বাসের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিতে যাচ্ছে দলটি।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও এ ব্যাপারে করা আপিলের নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বিএনপি।
তারা মনে করছে, প্রার্থীর সমর্থনকারী নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল করলেও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিলের মাধ্যমে প্রার্থিতা ঠিকই ফিরে পাবেন তিনি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এবং ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির হয়ে কাজ করছেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বচনের সিদ্ধান্তকে শুরু থেকে চলমান আন্দোলন কর্মসূচিকে ‘ব্যাহত’ করার ‘সরকারি উদ্যোগ’ হিসেবে দেখছিল বিএনপি।
তাদের আশঙ্কা ছিলো, গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটিতে নির্বাচন দিয়ে সরকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন ব্যাহত করতে চায়। পাশাপাশি এই জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দিতে চায়।
জানা গেছে, ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দেওয়ার এই সুযোগ নষ্ট করতেই ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আর এজন্যই তিন সিটিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরকে ‘রুটিন হরতাল’র আওতামুক্ত রাখে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রার্থী সমর্থনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকার দক্ষিণে মির্জা আব্বাস, উত্তরে আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং চট্টগ্রামে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মনজুরুল আলমকে মেয়র পদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু এ-সত্ত্বেও ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের পাশাপাশি দলের অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাছিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
বুধবার মনোনয়নপত্র যাচাই শেষে মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম ও আসাদুজ্জামান রিপনের প্রার্থিতাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করায় নাছিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির তিন আগ্রহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মির্জা আব্বাসকেই মাঠে রাখতে চান দলটির চেয়ারপারসন। অন্য দুই প্রার্থীকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিতে যাচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বসবেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বাংলানিউজকে বলেন্, ঢাকা দক্ষিণে শেষ পর্যন্ত কে মাঠে থাকবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দল। ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই। তবে আমি মনে করি, দক্ষিণে প্রার্থী সমর্থনের জন্য আমাদের আরেকটু ভাবতে হবে।
এদিকে উত্তরে একমাত্র প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের আগেই বড় ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি।
স্থানীয়-সরকার নির্বাচনের বিধান হচ্ছে, প্রার্থিতার প্রস্তাবক ও সমর্থককে নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে। অথচ আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সমর্থক আবদুর রাজ্জাক উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটারই নন। ফলে মনোনয়নপত্র পূরণের ক্ষেত্রে স্থানীয়-সরকার নির্বাচনের আইন ভঙ্গ হয়েছে। আর তাই মিন্টুর প্রার্থিতা যথারীতি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এখনই হাল ছাড়ছে না বিএনপি। তারা আশাবাদী, বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করার সুবাদে আগামী ৬ দিনের মধ্যে নিজের প্রার্থিতার বৈধতা ফিরে পাবেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। আর সেক্ষেত্রে তিনিই হবেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি-সমর্থিত একমাত্র প্রার্থী।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টার পর আব্দুল আউয়াল মিন্টুর আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেছেন।
সূত্র জানায়, আপিলের ইতিবাচক নিষ্পত্তির মাধ্যমে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষিত হলে বিএনপি-সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে তিনিই মাঠে থাকবেন। আর তা যদি শেষ পর্যন্ত না-ই হয়, সেক্ষেত্রে তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকে বিকল্প হিসেবে ভেবে রেখেছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আব্দুল আউয়াল মিন্টু আপিল করেছেন সেহেতু এখন পর্যন্ত তিনিই আমাদের একমাত্র প্রার্থী। আপিল নিষ্পত্তির পরপরই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৫