ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশের পরও কৌশলে কাউন্সিল এড়িয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল- সব পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে রয়েছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, অভিযোগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা যায়।
কাউন্সিল নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের ভাষায়, ‘ছাত্রলীগের গণঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটিতে আসতে হলে বয়স ২৯ বছরের মধ্যে হতে হয়। নিয়মিত ছাত্র হতে হয়। তাহলে, কাউন্সিল কেন নিয়মিত হবে না? কাউন্সিল আটকে থাকলে তো আমাদের বয়স আটকে থাকে না!’
এদিকে, বারবার কথা উঠলেও জেলা কমিটির শিডিউল ঘোষণা দিয়ে সম্মেলনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ ২৬ মার্চ সকালে ধানমন্ডিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে বলেন, ‘তোমরা সাবেক হবে কবে? তাড়াতাড়ি কাউন্সিল করে কমিটি দিয়ে সাবেক হও। ’ এরপর ২ এপ্রিল ৯টি জেলা শাখায় কমিটি দেওয়ার শিডিউল ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার অভিযোগ, জেলা কমিটির ধোঁয়া তুলে সম্মেলনের বিষযটি এড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই। ২০১৪ সালের শেষ দিকে সম্মেলন করার দাবি উঠেছিল সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদক বলেছিলেন, ‘এটাই আমাদের শেষ প্রোগ্রাম। শিগগিরই সম্মেলনের আয়োজন করবো আমরা। ’
এরপর প্রস্তুতি নিতে ৬ জানুয়ারি ২২টি জেলায় সম্মেলনের শিডিউলও ঘোষণা করেন তারা। সেসময় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলেন, জেলা কমিটি শেষে হলে সম্মেলন করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ২২ শাখার একটিরও কমিটি বা সম্মেলন করতে পারেনি তারা। তার উপর আবার এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ৯ জেলায় সম্মেলনের শিডিউল দিয়েছে। এগুলোরও সম্মেলন হবে না, এটা তাদের কাউন্সিল এড়ানোর কৌশল।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তারিখ নিয়ে সম্মেলন করব। এজন্য জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করছি। কিছু জেলার সম্মেলন হয়েছে। শিডিউল হয়েছে কিছু। এছাড়া বাকিগুলো; বিশেষ করে ঢাকা মহানগর ও জেলার শিডিউল দেব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ১০১টি সাংগঠনিক জেলা শাখা। গত চার বছরে ৫৫টি জেলা সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলোর সম্মেলন দিতে তো আরও চার বছর লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই এক কমিটির সময়েই ছাত্রদলে দু’বার সম্মেলন হয়েছে। এছাড়া বাকি ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়েছে তিনবার।
ওই সহ-সভাপতির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সম্মেলন না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক কাজ। ভেঙে পড়ছে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড। বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে অভিজ্ঞ ও তুলনামূলক যোগ্য নেতাদের।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞদের বয়স শেষে হলে অযোগ্য ও নিজেদের অনুসারীদের কমিটিতে আনতেই সম্মেলন দিতে বিলম্ব করছে বর্তমান কমিটি। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে মূলদল আওয়ামী লীগ নিজেদের জেলা শাখাগুলোর সম্মেলন শেষ করেছে। আর আমাদের (ছাত্রলীগ) একটা জেলারও সম্মেলন দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতারা চিকিৎসার নামে গত তিনমাসে পাঁচবার বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন ঠিকই। কেউ কেউ আবার হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরতেও গেছেন।
২০১১ সালে ছাত্রলীগের সবশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত দু’বছর পার করেছে বর্তমান কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৫
এসইউজে/এএ