গুলশান থেকে: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে ইতি ঘটতে পারে টানা তিনমাসেরও বেশি সময় রাজনৈতিক কার্যালয়ে তার অবস্থানের সময়।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রয়েছেন তিনি।
খালেদার কার্যালয় ত্যাগ ও আদালতে গমনকে কেন্দ্র করে গুলশান ও সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, রোববার (৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় কার্যালয় ত্যাগ করে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি।
রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছেন খালেদা। মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ওই দুই মামলায় খালেদাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে শুনানি হবে এদিন। আদালতের কাছে জামিন চাইবেন খালেদা।
কার্যালয়ে অবস্থানকারী অন্য একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, সকালে হালকা নাস্তা সেরেছেন খালেদা। কার্যালয়ের দোতলার নির্দিষ্ট কক্ষটিতে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি।
দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়া বাইরে আসছেন, আদালতে যাবেন- তাই গুলশানে মিডিয়া কর্মীদের ভিড়ও ক্রমশ বাড়ছে। কর্তব্যরত পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
ডিএমপি’র গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় যেন কোনোরকম ঘাটতি না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবো আমরা। কার্যালয় থেকে বের হয়ে আদালতে যাওয়া পর্যন্ত তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তাও বাংলানিউজকে জানান, খালেদা জিয়াকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে তাদের প্রতি।
খালেদার সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানাসহ কার্যালয়ের কয়েকজন স্টাফ।
তাদের কেউ কেউ খালেদার গাড়িবহরের সঙ্গী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে। তারাও সকাল থেকে কার্যালয় ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খালেদার মিডিয়া উইং সূত্র সকাল আটটার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম (খালেদা) তৈরি হচ্ছেন। আদালতে সময়মতো যেতে চান তিনি।
শনিবার (৪ এপ্রিল) খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট নজরুল খালেদার আদালতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নজরুল এও বলেছেন, সকালের পরিস্থিতির ওপর সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। তবে তিনি আদালতে যেতে চান।
এদিকে খালেদার যেহেতু আদালত থেকে বাসায় যাওয়ার কথা রয়েছে সেখানেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে শনিবারই।
বিকেলের মধ্যেই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তার বাসাটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা হয়। খালেদার কক্ষ, বাইরের বাগান ও বসার ঘরটি আগের মতো করেই গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
দুপুরে বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সিএসএফ সদস্যদের (চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্স) তত্ত্বাবধানে যাবতীয় কাজ সমাধা করা হচ্ছে।
সিএসএফ’র এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, বাসা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা) যদি রোববার আদালতে যান, সেক্ষেত্রে বাসায় আসার সম্ভাবনা বেশি।
সিএসএফ সদস্য আরও বলেন, বাসায় ফেরার বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে ফিরিয়ে নেওয়া পুলিশ সদস্যদের পাঠাবে প্রশাসন। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি হবে না বলে নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ সদস্য।
গত ১ মার্চ খালেদার বাসার নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
সিএসএফ সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন বলেই তাদের জানিয়েছেন ও সামগ্রিক প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। তবে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতিও একই সঙ্গে রাখতে বলেছেন তিনি।
এদিন বিকেলে কার্যালয়ের সামনের ফটক ঘেঁষে রাখা গাড়িটিও পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। চালক আবুল বাশার বালতিতে কাপড় ভিজিয়ে ঘষে পরিষ্কার করছিলেন খালেদার প্রটোকলের গাড়িটি।
খালেদার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, এই তিনমাসে বাসা থেকে খালেদার ব্যবহারের বিভিন্ন সামগ্রী কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। সেগুলো একইভাবে একটু একটু করে এ ক’দিনে ফেরত নেওয়া হয়েছে বাসায়।
গুলশান সূত্র শনিবার বাংলানিউজকে জানায়, খালেদা চান, আদালত থেকে যদি তাকে বাসায় যেতেও হয়, কার্যালয়টিতে নিয়মিত যাতায়াতের সুযোগ যেন তিনি পান।
রোববার খালেদাকে গ্রেফতার বা তার কার্যালয় তল্লাশির আশঙ্কা সেভাবে করছেন না খালেদার ঘনিষ্ঠরা। যদিও ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এরপর ১ মার্চ তার কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশ আসে ও বাসার নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়। দুশ্চিন্তা অনেকের বাড়লেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে গুলশান থানার কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেন, খালেদার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো নির্দেশ তাদের প্রতি নেই, এমন কিছু তারা ভাবছেনও না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৫/আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা
এসকেএস/জেডএস/এএসআর