ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

খালি হাতে ঘরে ফিরলেন খালেদা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৫
খালি হাতে ঘরে ফিরলেন খালেদা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা:  সরকার পতনের দাবিতে টানা ৯২ দিন ছিলেন ঘরের বাইরে। অবশেষে রোববার ঘরে ফিরলেন বটে, কিন্তু অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও শেষ তক শূন্যই রইলো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাত।



গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিই ছিলো গত ৯২ দিনের ‘সহিংস’ আন্দোলনের মূল স্লোগান। কিন্তু সব চেষ্টা ফলহীন আস্ফালনে পরিণত হওয়ার প্রেক্ষাপটে টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতাল নির্ভর কর্মসূচিকে রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, গুলশান কার্যালয় ছেড়ে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন বিএনপি প্রধান। এরপর শুধুই তার পিছু হটার পালা।
 
দলীয় সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূতির দিন সামনে রেখে ৩ জানুয়ারি আঁটঘাট বেঁধেই ঘর থেকে বের হন খালেদা জিয়া।
 
টানা কয়েক মাস কঠোর কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর ‘দেশি-বিদেশি’ চাপ সৃষ্টি করাই ছিলো তার লক্ষ্য, ক্ষতাসীনরা যাতে আলোচনার মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
 
কিন্তু আন্দোলনের শুরু থেকেই সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে ‘নজীরবিহীন’ নাশকতা চালানোয় উল্টো চাপে পড়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। টানা ৩ মাসের আন্দোলনে দেড় শ’ লোকের প্রাণহানির দায় বর্তায় তার ওপর।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের কোনো আন্দোলনে এভাবে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা হয়নি। আগে রাজনৈতিক আন্দোলন মানে ছিলো পুলিশের হামলা, তাদের সঙ্গে মারামারি কিংবা দুই পক্ষের সংঘর্ষ। কিন্তু খালেদা জিয়ার এবারের আন্দোলনের একমাত্র অস্ত্র ‘পেট্রোলবোমা ও ককটেল’।
 
সূত্র জানায়, নাশকতানির্ভর আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত না হওয়ায় দেশি-বিদেশি কোনো মহল খালেদা জিয়াকে সমর্থন দেয়নি।
 
অধিকন্তু ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র সঙ্গে খালেদা জিয়ার ভূয়া ফোনালাপের খবর প্রকাশ, ৬ কংগ্রেসম্যানের নামে ভূয়া স্টেটমেন্ট, ছেলের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরজা থেকে ফেরত পাঠানো এবং বিশ্ব ইজতেমা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রেখে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া।
 
তাছাড়া প্রথম দিকে ঢাকার বাইরে কিছুটা প্রভাব থাকলে আন্দোলনে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের সম্পৃক্তা না থাকায় আস্তে আস্তে হরতাল অবরোধ নিত্যন্তই রুটিন কর্মসূচিতে পরিণত হয়। ফলে দাবি আদায় তো দূরের কথা, নিজের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও হরতালের ফাঁদে আটকে যান খালেদা জিয়া।
 
সূত্রমতে, এই ফাঁদ থেকে বের হবার জন্যই আন্দোলন ‘যৌক্তিক পরিণতিতে’ পৌঁছানোর আগেই হরতাল-অবরোধ শিথিল করে ঢাকা দক্ষিণ-উত্তর ও চট্টগ্রাম  সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। পাশাপাশি গত পৌনে তিন মাসের রুটিন ভেঙে রোববার সারা দেশকে হরতালমুক্ত রেখে আদালতে যান তিনি।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছ, খোদ বিএনপির মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, সরকারের সঙ্গে আপোস-রফা করেই রোববার হরতাল না দিয়ে ৯২ দিন পর গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে আদালতে গেছেন খালেদা জিয়া। গুলশান কার্যালয় ছেড়ে নিজের আয়েসি জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্যই এমনটি করেছেন তিনি।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া এভাবে ঘরে ফেরায় বিএনপির ‘ঝিমিয়ে পড়া’ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। দলের মাঠ-পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখন ধরে নেবে আন্দোলনের ইতি টেনেই ঘরে ফিরেছেন তাদের নেত্রী।
 
তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা তেমনটি মনে করছেন না। তারা বলছেন, আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় ও কৌশল থাকে। ৯২ দিন পর রাজনৈতিক কার্যালয় ছেড়ে খালেদা জিয়ার ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত সেই কৌশলেরই অংশ। আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের হলে একই স্থানে নেত্রীর অবস্থান অনির্দিষ্টকালের হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।  
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ম‍াহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশের অবিসংবাদিত নেতা। আন্দোলনের কোন পর্যায়ে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেটি তিনি ভালো করে জানেন।
 
তাছাড়া আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহার করে খালেদা জিয়া ঘরে ফেরেননি। আন্দোলন চলছে, চলবে। নেত্রীর কার্যালয় ত্যাগ আন্দোলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না-বলেন মাহবুবুর রহমান।
 
গত ৩ জানুয়ারি রাতে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে না দেওয়ায় ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তিনি।
 
এরপর ১৩ জানুয়ারি উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে শুক্র-শনিবার ছুটির দিন বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি কর্মদিবসে অবরোধের মধ্যেই হরতাল চালিয়ে যান খালেদা জিয়া।
 
এভাবে টানা ৯২ দিন পার করে রোববার বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে (৫ এপ্রিল) দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিয়ে সোজা গুলশানের ভাড়া বাসায় ফেরেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৫
এজেড/জেডএম

** ফিরোজায় খালেদা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।