ঢাকা: পরিবর্তন সম্ভব, আমরা পরিবর্তন চাই-স্লোগান নিয়ে আগামীর ঢাকা গড়তে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করলেন আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী জোনায়েদ সাকি।
প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি এ ইশতেহারে উঠে এসেছে ঢাকাকে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার।
গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থী সাকি বলেন, এই ঢাকা শহরের মানুষের জীবন ও সম্পদ, প্রকৃতি ও পরিবেশ যে বিপর্যয়ের মধ্যে আছে সে প্রেক্ষিতে আমরা সর্বত্র দেখছি পরিবর্তনের এক জাগরণী ডাক। মানুষ পরিবর্তন চায় এবং আমরা বিশ্বাস করি পরিবর্তন সম্ভব। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য, মানুষের আকাঙ্ক্ষার সম্মিলন ঘটানোর জন্য আমরা এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীর ঢাকায় সকল নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে, এ শহরকে নারী শিশু, তরুণ, প্রবীণের, অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষের, সকলের করে তুলতে, উৎপাদনশীল নগরী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নতুন কল্পনা, নতুন রাজনীতির।
আমরা বিশ্বাস করি ঢাকার নাগরিকরা বিশেষ করে তরুণরা নতুন রাজনীতির উদ্বোধন ঘটাতে এগিয়ে আসবেন।
নারীদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি নগরে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতিও দেন সাকি।
শনিবার প্রেসক্লাবের ভিআইপি গ্যালারিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই নির্বাচনী ইশতেহার পড়ে শোনার জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক নগর প্রশাসন পরিচালনাই হবে আমাদের মূলনীতি।
নবীন এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত কর্তৃপক্ষ ছাড়া ঢাকাকে বাসযোগ্য করা, সবগুলো পরিষেবা সুষ্ঠু প্রদান করা প্রায় অসম্ভব কাজ। আমাদের প্রথম ও প্রধান প্রস্তাব ঢাকা নগরের আওতার মাঝে সবগুলো সেবাপ্রদানকারী সংস্থাকে সমন্বিত করে একটি স্বশাসিত নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের প্রধান কর্মশক্তি এর তরুণ জনগোষ্ঠী। ঢাকায় উৎপাদনশীলতা সর্বোচ্চ বিকাশের অনুকূল পরিবেশ গড়তে এই তরুণদের কর্ম উদ্দীপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রযুক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। নারীদের জন্য রীতিমত শত্রুশিবিরে পরিণত হওয়া ঢাকা নগরীকে নারীদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ নগরে রূপান্তর করা হবে। নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হবে। নারীদের জন্য পৃথক নগর পরিবহনের ব্যবস্থাসহ কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে করা হবে। এমনকি একদিনের জন্য ঢাকা আসা নারীদের জন্যও নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে নগর সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি।
প্রবীণ নাগরিকদের কথা স্মরণ রেখে তার ইশতেহারে এসব নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়।
নগরীর পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নানা পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই নেতা।
তিনি বলেন,ঢাকা নগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করতে আমরা কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করবো। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এক বছরের মধ্যে নদী দূষণকারী সকল কারখানাকে হয় সম্পূর্ণ পানি শোধনাগার চালু করতে বাধ্য করা হবে, নয়তো সেগুলো স্থানান্তর করা হবে-এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
নগরবাসীকে নগর পরিবহনের সংকট থেকে মুক্ত করে উন্নত ও আরামদায়ক গণপরিবহনের ব্যবস্থারও অঙ্গীকার পাওয়া যায় সাকির ইশতেহারে।
এছাড়া খাদ্যে প্রতারণা ঠেকাতে মহানগরীর আওতাধীন এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক তদারককারী নিয়োগের অঙ্গীকার করেন তিনি।
সিটি কর্পোরেশনের আয়ে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন নতুন বিদ্যালয় নির্মাণে নগর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী করা এবং উচ্চ আয়ের নাগরিকদের উচ্চক্রম হারে শিক্ষা কর আদায়ের প্রস্তাবও আসে তার ইশতেহারে।
এছাড়া নগরের জন্য বিশেষ ন্যূনতম মজুরি, বস্তিবাসীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি লক্ষ্য করা যায় সাকির নির্বাচনী অঙ্গীকারে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৪
জেপি/এসই/আরআই