ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

‘আমার পদত্যাগ করা উচিত’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
‘আমার পদত্যাগ করা উচিত’ ছবি: কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমার পদত্যাগ করা উচিত। এই ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে তবে এর দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে’।



রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত এক শ্রমিকের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘রানা প্লাজা ট্রাজেডিকে অতিক্রম করে একটি সমাপ্তি ও একটি পুনর্গঠন কৌশলের সন্ধানে’ শীর্ষক ডায়লগের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। এ অনুষ্ঠানেই রানা প্লাজার নবম তলায় কর্মরত অবস্থায় নিহত শ্রমিকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, স্বামীর লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। এর বাইরে গত দুই বছরে একটি টাকাও সাহায্য পাইনি। মনোয়ারা বেগমের এ বক্তব্য শুনে তাৎক্ষনিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার।

সচিব বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কোটি-কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি সংস্থাসমূহও বহু টাকা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ পরিবারটি কেন ক্ষতিপূরণ পায়নি, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। যদিও মনোয়ারা বেগমের স্বামী কোনো গার্মেন্টসে চাকরি করতেন না। তিনি ওই ভবনের কনস্ট্রাকশনের কাজ করতেন।  

এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদীর কাছ থেকে বক্তব্য আশা করেন। পরবর্তীতে বক্তৃতাকালে সালাম মুর্শেদী এ প্রসঙ্গে আর কোনো কথা বলেননি। এতে মূল বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন।       

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সম্মিলিত গার্মেন্টস ও দর্জি শ্রমিক লীগের সভাপতি রায় রমেশ চন্দ্র, বিলস'র সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্যারিস্টার সারা হোসেন।   

দেবপ্রিয় বলেন, ৮শ’ কারখানা যারা বিজিএমইএ’র সদস্য নয়, এসব কারখানায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তবে তার দায়িত্ব কে নেবে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ৩২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্সেস বা জিএসপি পুনরায় চালু করা যায় কিনা সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান দেবপ্রিয়।  

বিলস’র সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫ বা ১০ বছরের প্রকল্প দিয়ে নয়, আহতদের আজীবন চিকিৎসা লাগবে। সাধারণ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে তারা সঠিক চিকিৎসা পাবে না। এজন্য একটি হেলথ কেয়ার সেন্টার তৈরি করা প্রয়োজন।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত জেসমিন তার কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। জেসমিন ওখানে একটি গার্মেন্টস কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

‘এখনো শব্দ শুনলে ভয় লাগে। উপর হয়ে শুতে হয়। ভালোভাবে হাঁটতে পারি না, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারি না। মাথা প্রায়ই অবশ লাগে’- বলেন জেসমিন। ওই দুর্ঘটনায় জেসমিনের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। এরপর থেকে তিনি আর পুরোপুরি সুস্থ নন। অর্থাভাবে, চিকিৎসার অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন।

জেসমিন জানান, ২০০৪ এ বিয়ে হয়েছে। তিন বছরের মাথায় তার স্বামী তাকে তালাক দেন। এরপর জীবিকার তাগিদে গার্মেন্টসে কাজ নেন। নিয়মিত বেতন না পেলেও একটি সন্তান নিয়ে তার জীবন ভালোই ছিলাম। কিন্তু রানা প্লাজার দুর্ঘটনা তার জীবনের সবকিছু শেষ করে দেয়।

তিনি বলেন, মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। দুইদিন পর তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর সাভার থেকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। হাঁটতে পারতাম না। সাভারের সিআরপিতে মেরুদণ্ডের অপারেশন করা হয়।

কিন্তু এখনো জেসমিন সুস্থ নন। তিনি নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না। প্রতি মাসে তার চিকিৎসার জন্য ৩/৪ হাজার টাকা লাগে। দুর্ঘটনার পর বিকাশে ৫০ হাজার টাকা পান। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পান ১০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের টাকা তুলতে তাকে আবার ২/৩ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

‘আমি সুস্থ থাকলে দুই বছরে অন্তত আড়াই লাখ টাকা পেতাম। অথচ এই সময়ে আমি পেলাম মাত্র ৫০ হাজার টাকা’- যোগ করেন তিনি।    

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
আইএইচ/এএসএস/আইএ

** ‘এখনও শব্দ শুনলে ভয় লাগে’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।