ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

মনজুর-নাসিরকে ছাপিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
মনজুর-নাসিরকে ছাপিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী এম মনজুর আলম, আ জ ম নাসির ও মহিউদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীকে ছাপিয়ে উঠেছেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। অবস্থা এ রকম যে তিনি যাকে চাইবেন তিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন! অর্থাৎ ট্রাম্পকার্ড এখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতেই।


 
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হালিশহর, নাসিরাবাদ, চট্টেশ্বরী, জামালখান, কাজীর দেউড়ী, লালখান, ওয়াসা মোড়, অক্সিজেন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত পাওয়া গেছে।
 
চট্টগ্রামবাসী পৌনে ৫ বছর আগে মহিউদ্দিনকে হটিয়ে নগরপিতার আসনে বসিয়েছিলে এম মনজুরকে। সদ্য বিদায়ী এই মেয়রের ব্যর্থতায় বন্ধ হয়ে গেছে সিটি করপোরেশনের অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান। পর্যটন নগরী ‌এখন ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে উঠেছে।
 
নানা কারণে যারা মহিউদ্দিনকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। তারাই এবার বলতে শুরু করেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীই ভালো ছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই সাবেক এই সফল মেয়র। অন্যদিকে নাসিরের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী মদদদানের অভিযোগ। নগরবাসী অনেকে মনে করছেন, নাসির মেয়র হলে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি বেড়ে যেতে পারে।
 
ট্রাম্পকার্ডধারী যখন আওয়ামী লীগের হাতে তখন স্বস্তিতে থাকার কথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর। কিন্তু ট্রাম্পকার্ডধারী এই নেতাকে পুরো আস্থায় নিতে পারছেন না নাসির অনুসারীরা। সীমিত আকারে প্রচারণায় অংশ নিলেও তা রহস্যবৃত্ত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
 
শুক্রবার বেলা ১১টায় নাসিরাবাদ হাউজিংয়ের বি-ব্লকে একটি নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ স্লোগান দিচ্ছিল ‘মহিউদ্দিন ভাই, মহিউদ্দিন ভাই.......। বক্তব্য শেষে ওই ছেলেরাই কাউন্সিলর প্রার্থীর মিষ্টি কুমড়ার পক্ষে স্লোগান দেন। এই গ্রুপটির মুখে একবারও শোনা যায়নি নাসির কিংবা হাতি মার্কার স্লোগান। মহিউদ্দিন চলে যাওয়ার সময়ও মিষ্টি কুমড়ার স্লোগান দিতে থাকেন।
 
এককোণে উপদলে বিভক্ত হয়ে ছিলেন ৫/৭ জন যুবক। মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে যাওয়ার পর তারা আ জ ম নাসিরের পক্ষে স্লোগান দেন। তাদের সঙ্গে একজনও গলামেলালেন না মহিউদ্দিন ভাই বলে যারা গলা ফাঁটাচ্ছিলেন। নাসির অনুসারী একজন ছাত্রলীগ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকা রহস্যজনক। ওপরে ওপরে নাসিরের পক্ষে দেখালেও তাকে নিয়ে সবার মনেই সন্দেহ আছে।
 
আপনাদের এই সন্দেহের কারণ কী? জবাবে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অবিশ্বাস করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। দৃশ্যত মনজুর মেয়র হলেও শেষ তিনবছর নগর ভবন চলেছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ইশারায়। বিষয়টি নগরবাসীর কাছে ওপেন সিক্রেট।
 
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মেয়র মনজুর। তাদের অবস্থান দুই মেরুতে হলেও একই কমিটিকে রয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীও। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য। যা তিনি ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এ কারণে নগরবাসীর সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে।
 
সিটি করপোরেশনের ওষুধ কোম্পানিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জামাতা রয়েছেন বহাল-তবিয়তে। নগরের বিলবোর্ড ব্যবসা পুরো নিয়ন্ত্রণ করছেন মহিউদ্দিন অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা।
 
লিটন নামের একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক বাংলানিউজকে বলেন, তাদের এলাকায় ড্রেনেজ সমস্যা হয়েছিল। তারা কয়েকজন মেয়র মনজুরের কাছে গিয়েছিলেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রধান নির্বাহীকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরের দিনেই তাদের সমস্যা মিটে যায়। তাহলে কী দাঁড়ালো।
 
অনেকে মন্তব্য করেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ও জামাতা যেভাবে চাইতেন ঠিক সেভাবেই কাজ করতেন মেয়র মনজুর। মেয়র না হলেও মহিউদ্দিনের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল পৌনে গত ৫ বছর জুড়েই। নাসির মেয়র হলে সেই প্রভাব ক্ষুন্ন হতে পারে। কারণ নাসিরের সঙ্গে চিরবৈরিতা রয়েছে তার। মহিউদ্দিনের কারণেই চট্টগ্রামে ২২ বছর মূল ধারার রাজনৈতিক দৃশ্যপটের বাইরে থাকতে হয়েছে নাসিরকে।
 
মেয়র হলে প্রতিশোধ পরায়ন হতে পারেন। সে কারণে মনজুরকেই বেশি পছন্দ করতে পারেন মহিউদ্দিন চৌধুরী! আর এমনটি সত্যি হলে নাসিরের কপাল পুড়তে পারে।
 
মহিউদ্দিনের বাইরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে আরও কিছু উপদল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আফসারুল আমিন গ্রুপ, নুরুল ইসলাম বিএসসি, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ সালামের গ্রুপ। এরা মহিউদ্দিন বিরোধী হলেও নাসিরকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছে না।
 
আফসারুল আমিন অনুসারী এক নেতা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এক ঘরোয়া বৈঠকে আফসারুল আমিন তাদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) প্রার্থী দিয়েছেন। তারপক্ষে তো কাজ করতেই হবে। কিন্তু খেয়াল রেখো যেন, নগরপিতার চেয়ারে কোনো সন্ত্রাসী না বসতে পারে’।
 
এখানে কৌশলে নাসিরকে ইঙ্গিত করেছেন বলেও মনে করেন আফসারুল আমিন অনুসারী এই নেতা।
 
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এক কর্মীসভায় বলেছেন, আমার ভূমিকা নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করেন তাদের ধারণা সঠিক নয়। আমি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি নাসিরকে বিজয়ী করার জন্য।
 
এসব সমীকরণের বাইরে ‍নগরপিতার পথে নাসিরের অন্যতম বাধা হচ্ছে, নগরবাসীর অনেকের কাছে সন্ত্রাসের মদদদাতা হিসেবে ব্যাপক জনশ্রুতি। এই ধারণা রিকশা চালক থেকে ব্যবসায়ী মহল পর্যন্ত বিস্তৃত। বাস্তবতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নগরবাসীকে এই ধারণা ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছেন নাসির।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
এসআই/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।