ঢাকা: আসন্ন সিটি নির্বাচনের ভোট চাইতে আর মাঠে নামছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গাড়িবহর নিয়ে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালানোয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) চিঠি দিয়ে সতর্ক করলে বিএনপি প্রধান এ সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান শনিবার (২৫ এপ্রিল) গুলশান-২ নং সেক্টরের ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় চিঠি পৌঁছে দেন।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে বাংলানিউজকে রফিকুল বলেন, ইসির দেওয়া চিঠি আমি নিজে গিয়ে খালেদা জিয়ার বাসায় পৌঁছে দিয়েছি। চিঠি গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, চিঠি পাওয়ার খবর আমিও শুনেছি। তবে চিঠিতে কী আছে, সেটি এখনো জানতে পারিনি। খুব সম্ভবত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ব্যাপারে অন্যদের যেভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে ম্যাডামকে সেভাবে চিঠি দিয়েছে ইসি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন রোববার (২৬ এপ্রিল) রাত ১২টা পর্যন্ত দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরে গণসংযোগের ইচ্ছা ছিলো খালেদা জিয়ার।
তবে নির্বাচন কমিশনের সতর্ক বার্তা হাতে পৌঁছানোর পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। এ কারণেই সব রকম প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শনিবার গণসংযোগে নামেননি খালেদা জিয়া।
এ ব্যাপারে শিমুল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম রোববার প্রচারণায় বের হবেন কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বের হলে আপনারা জানতে পারবেন।
এদিকে প্রচারণার শেষ দিন রোববার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন খালেদা জিয়া। শনিবার বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান এ তথ্য জানান।
গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েন খালেদা জিয়া। এর পর টানা পাঁচ দিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান বিএনপি প্রধান।
প্রথম দুই দিন কোনো অঘটন না ঘটলেও তৃতীয় দিন সোমবার (২০ এপ্রিল) কারওয়ান বাজারে প্রতিপক্ষের প্রতিরোধের মুখে পড়েন খালেদা জিয়া।
এর পরের দিন মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ফকিরেরপুলে ফের হামলার শিকার হন তিনি। বুধবার (২২ এপ্রিল) আবারও বাংলামোটরে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এবারের হামলায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হন তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিএসএফ’র কয়েকজন সদস্য। ভাংচুর চালানো হয় বহরে থাকা ৭/৮টি গাড়িতে।
পরের দিন বৃহস্পতিবার আর বের হননি বিএনপি প্রধান। তবে একদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার ফের দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নামেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে গাড়িবহর নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
সূত্র জানায়, শনিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ইসির পত্রবাহক মহসিন আলী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি পৌঁছে দেন।
তবে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এদিন দুপুর ২টায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। নয়াপল্টন কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা ইসির চিঠি রিসিভ করেননি।
অথচ এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির এই নেতা বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এই নির্দেশ অকার্যকর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেউ যেন গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় নামতে না পারে- সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শনিবার সকালেই ডিএমপি কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
ইসির এই নির্দেশ পাওয়ার পর শনিবার দুপুর আড়াইটায় গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে খালেদা জিয়ার বাসায় চিঠি পাঠায় ডিএমপি কমিশন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নির্দেশ অমান্য করে খালেদা জিয়া যদি ফের গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় নামেন, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অর্ডার ফলো করবে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
এজেড/জেডএম