ঢাকা: ‘ওপরের চাপে’ শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ (লাটিম প্রতীক)। দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করে ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতা ও তার অনুসারীরা আসাদের পক্ষে প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তেই তাকে সরে যেতে হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাইন উদ্দিন বাবুও সরে যাচ্ছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে তার সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি কোনো দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। বাবুকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করবেন আসাদ। সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত জানাতেই সংবাদ সম্মেলন।
সূত্রগুলো বলছে, এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই আসাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করবেন।
মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা নিয়ে গঠিত ২১নং ওয়ার্ডে (সাবেক ৫৭ নং) কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন আসাদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট এমএ হামিদ খানকে (ঠেলাগাড়ি প্রতীক)। দলীয় সমর্থন না পেলেও তাকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ছাত্রলীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র্য প্রার্থী হিসেবেই আসাদ জোর প্রচারণা চালান। তার পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ঢাবি ও হল শাখার নেতারা। এমনকি প্রচারণার শেষদিন (রোববার) পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হামিদ খানের কোন লোকজনকে ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেয়নি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একাধিকবার হামিদ খানের সমর্থকরা ঢুকতে চাইলেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ।
হামিদের বিপক্ষে অনলাইনেও জোর প্রচারণা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তোলা হামিদের একটি ছবি নিজের ওয়ালে পোস্ট করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজেই। দলীয় সমর্থন পাওয়া হামিদকে কুলাঙ্গার ও অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দেয় ছাত্রলীগের অনেক নেতা।
রোববার প্রচারণার শেষ দিনে আসাদ ঢাবির টিএসসি সংলগ্ন সড়কদ্বীপে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন নেতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। ইশতেহার ঘোষণা শেষে সম্মিলিতভাবে তারা ক্যাম্পাসে প্রচারণাও চালান। কিন্তু রাতেই জানা যায় আসাদকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে।
এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মূলত ৬ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এমএ হামিদ খান (ঠেলাগাড়ি প্রতীক) এবং বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী সাবেক কমিশনার খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব (রেডিও প্রতীক)। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ (লাটিম) এবং ঢাবির সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সভাপতি মাইন উদ্দিন বাবু (কাটা চামচ)। আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এসএম এনামুল হক আবির (ঘুড়ি প্রতীক), মো. শাহাবউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু (ঝুড়ি)। এরাও আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে শেষোক্ত দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারবেন না বলেই ভোটারদের ধারণা।
সূত্রগুলো বলছে, আসাদ নির্বাচনে থাকলে ঢাবির একটি বড় অংশের ভোট তার পক্ষে পরবে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাইন উদ্দিন বাবুর পক্ষেও পড়বে অপর অংশ। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হামিদের ভোট কমবে। তাছাড়া দলীয় ভোট দুই বা তিনভাগে ভাগ হয়ে গেলে সুবিধা পাবেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাজা হাবিব। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কারও জিতে আসা কঠিন হয়ে পড়বে। এসব বিবেচনায়ই সরে জেতে বলা হয়েছে আসাদকে। তবে কেন তাকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে তা বিস্তারিত জানা যাবে সোমবার সকালের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পরই।
অন্যদিকে রোববার পর্যন্ত ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় বেশ জোর প্রচারণা চালাতে দেখা যায় মাইন উদ্দিন বাবুর সমর্থকদের। শোনা যাচ্ছে সরে যাচ্ছেন বাবুও। তবে তার সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি কোন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
এসএ/কেএইচ