ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ভোট মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল)। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণে সহায়তার জন্য প্রস্তুত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। শুধুমাত্র ঢাকাতেই ৪০ হাজারেরও অধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থেকে কাজ করবেন। আরো পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য রিজার্ভ থাকবেন। তারাও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা মোকাবেলা করতে মাঠে নামার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভেদে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরুও হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি টহল দিচ্ছে।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোট গণনা ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা শেষ হওয়ার পরও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
এজন্য সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকা থাকছে ব্যাপক নিরাপত্তার আওতায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা যেন উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। আমাদের প্রতিটি সদস্য নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তিনটি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণও করা হবে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা দেখলে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার সব ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ জানান, নির্বাচনে প্রতি দুই ওয়ার্ডের জন্য র্যাবের একটি করে টহল টিম থাকবে। ঢাকায় র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে একটি করে কন্ট্রোল রুম থাকবে। নিয়ন্ত্রণ করা হবে সদর দফতর থেকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে কাজ করে যাবে র্যাব।
তিনি বলেন, র্যাবের প্রতিটি টহলগাড়ি জিপিএস ট্রাকিং সিস্টেমের আওতায় থাকবে। যেন তাদের অবস্থান বোঝা যায় এবং দ্রুত কোথাও পাঠানো সহজ হয়।
তিন সিটি নির্বাচনে র্যাবের ৫ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
র্যাবের প্রায় ১৩৪ টিম সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে। তারা কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। যখনই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা তারা দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা জানান, ঢাকা সিটির উত্তর দক্ষিণের জন্য ৭০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য ইতোমধ্যে টহল দেওয়া শুরু করেছেন। অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিজিবি কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ডিএমপি’র একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবেন। এছাড়াও মাঠে থাকবে গোয়েন্দা পুলিশের সবগুলো টিম। রাজধানী ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে ইতোমধ্যে পুলিশ সদস্যরা ঢাকায় চলে এসেছেন। তারা সোমবার থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
সূত্র জানায়, ভোটের দিন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকেই পুলিশ কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের অবস্থান নিয়েছে। পাড়া মহল্লা শুরু করে সব স্থানেই ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের অবস্থান থাকছে।
সূত্রটি জানায়, ওই দিন যেন কেউ নাশকতা চালাতে না পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনাকে ঘিরেও থাকবে নিরাপত্তা বলয়।
পল্টন থানার ওসি গোলাম মোর্শেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন ও আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে আমরা কাজ শুরু করেছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সার্বক্ষণিক টহল চলছে।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রামপুরা থানার অপারেশন অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। ভোটের দিনও যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, নগরবাসী যেন নিরাপদে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সদা প্রস্তুত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
আইএ/এএসআর
** ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে