ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

বগুড়ায় বিএনপি নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা

টি এম মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
বগুড়ায় বিএনপি নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা

বগুড়া: ফটো সেশনের জন্য পাঁচ-দশ মিনিটের সংক্ষিপ্ত কোনো কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম নেই বগুড়া জেলা বিএনপির।

২০ দলীয় জোটের গত তিন মাসের চলা লাগাতার অবরোধ ও হরতালেও মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা, মানববন্ধন, স্মারকলিপি, গণসংযোগের মতো তেমন কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দেখা যায়নি তাদের।



সম্প্রতি ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় অংশগ্রহণকালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলার প্রতিবাদেও কোনো প্রকার কর্মসূচি দেওয়া হয়নি বগুড়ার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন থেকে।

সংবাদের শিরোনাম হতে ঘরের দরজায় অতি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করার কারণে বগুড়া বিএনপিকে এখন ‘কাগজের বিএনপি’ বলছে খোদ দলের সমর্থকরাই।

তৃণমূলের এসব কর্মী-সমর্থকরা শুধু সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

সমর্থকদের প্রশ্ন, বিএনপির মিছিল-সমাবেশ কেন রিয়াজ কাজী লেন বা মফিজ পগলার মোড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? সে মিছিল কেন শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় হবে না? মিছিলে কেন ৩০/৪০ বা ৫০ জনের বেশি উপস্থিতি থাকবে না। যে বিএনপির মিছিলে রাজপথে হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকার কথা, সেখানে আজ কেন তাদের এই দশা?

তাদের দাবি, সমর্থক আছে, ভক্ত আছে, নেই শুধু অন্তর দিয়ে বিএনপিকে ভালবাসার নেতা। যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা কেন্দ্রকে দেখানোর জন্য কৌশলে গুটি কয়েক গণমাধ্যমে তাদের সংবাদ প্রকাশ করিয়ে নেন। আবার কখনও নিজেদের পদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অতি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করেন সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন এলাকায়।      

ঘরে বসে কিংবা লুকিয়ে থেকে কাগজে বিবৃতি দিয়ে হরতাল ডাকেন তারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দোহাই দিয়ে বারবার মাঠ ছেড়ে ঘরে উঠছেন বিএনপির সুবিধাবাদী এসব নেতৃত্ব। প্রকৃতপক্ষে, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারায় কর্মসূচি ডেকে বাস্তবে তার সামান্য প্রতিফলনও ঘটাতে পারছেন না তারা।

এজন্য বিএনপি নেতারা স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করলেও বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের সফলতা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, সেটা বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও আওয়ামী লীগের সফলতা। বিএনপির উচিত ছিল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত তাদের পক্ষে করে নেওয়া। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থাকলে, সেগুলো তুলে ধরা। কিন্তু কোনোটাই সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি কথিত আন্দোলনকারী বিএনপি নেতারা।  

জেলা বিএনপির বয়োজোষ্ঠ্য এক নেতা জানান, মানুষ বর্তমান সরকারকে মেনে নিতে পারছে না- এটা সত্য। কিন্তু সেজন্য যে ধরনের প্রক্রিয়ায় আন্দোলনে যাওয়া উচিত ছিল, বিএনপি সেটা পারছে না। তাছাড়া উপযুক্ত নেতৃত্ব ও সঠিক কৌশলের অভাবসহ কয়েকটি কারণে মাঠে নামতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন তৃনমূল কর্মীরা। যে কারণে লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক থাকলেও সেটা কোনো কাজে আসছে না।     

যুবদল ও ছাত্রদলের পদধারী তিন নেতা মনে করছেন, মূলদল বিএনপি তাদের সঙ্গে সমন্বয় না করায় ক্রমেই কর্মসূচি দূর্বল হয়ে পড়ছে। তাছাড়া দলে কর্মীদের মূল্যয়নের চর্চা একেবারেই কমে গেছে বলে আজ দলের এই অবস্থা হয়েছে।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা দাবি করেছেন, বগুড়ার বিএনপি এখনও শক্তিশালী রয়েছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নেতৃত্বের ত্রুটির বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, সারাদেশে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের ধারবাহিকতায় বগুড়ায়ও বিএনপির নেতাকর্মীরাও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও হামলার স্বীকার হচ্ছেন।

তবুও পিছুপা না হয়ে, আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার বিএনপি, বলেন তিনি।   

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা,  ২৮ এপ্রিল, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।