ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে বিএনপি নেতারা যেন ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরটিরই অপেক্ষায় ছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো, প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার চেয়ে এদিন তারা বরং সংবাদ সম্মেলন করার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
গত এক পক্ষকাল প্রার্থীদের পক্ষে তাদের প্রচারাভিযানও তেমন জোরালো ছিল না। এমন কি মঙ্গলবার ভোটের দিনেও তাদের অধিকাংশই ভোটদানে বিরত থেকেছেন। অথচ দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। অর্থাৎ প্রচারণা ও ভোটদানের চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করাটাই যেন হয়ে উঠল মুখ্য।
ব্যাপারটা মিডিয়াকর্মীদের নজর এড়ায়নি। তাই অতি-উৎসাহী জনাকয় মিডিয়াকর্মীকে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে শোনা গেল: ‘রাজপথে দেখা নেই, ভোটকেন্দ্রে দেখা নেই অথচ তারা এখানে (বিএনপি কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে) এসেছেন চেহারা দেখাতে!’
মঙ্গলবার ভোটের দিন দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে দেখা গেল গোটা আটেক কেন্দ্র চষে ফিরতে। অবশ্য স্বামীর পক্ষে তিনি একাই প্রচারণা চালিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন। তার ব্যক্তিগত উদ্যমটা সে-কারণে সবারই বেশ নজর কেড়েছে। অনেকেই অনুমান করছেন, ঘরকন্যার কাজ চুকিয়ে অদূর ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতিতে নামবেন। মেয়র নির্বাচনে ‘পলাতক’ স্বামীর হয়ে প্রচারকাজ চালিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়িটাই নিয়ে নিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে আটটায় আফরোজা আব্বাস হাজির হলেন গিয়ে ফকিরাপুল বাজারের কোমরগলির ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্র ঘুরে দেখে তিনি অভিযোগ করলেন, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কারচুপি চলছে। তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। পরে আফরোজা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়েও একই অভিযোগই করেন।
আফরোজা পর্যায়ক্রমে গেলেন শান্তিনগর বালিকা বিদ্যালয়কেন্দ্রে, ভিকারুন-নিসা স্কুলকেন্দ্রে, সেগুনবাগিচা বালক ও বালিকা বিদ্যালয়-কেন্দ্রে এবং খিলগাঁও প্রাইমারি স্কুলকেন্দ্রে। প্রত্যেক কেন্দ্র ঘুরে তার একই অভিযোগ, কেউই ভোট দিতে পারছে না। ব্যালট পেপার নেই, আগেভাগেই সব ব্যালট-বাক্স ভরে ফেলা হচ্ছে।
কিন্তু নজরকাড়া ব্যাপার হলো, নেতা পর্যায়ের কাউকে, এমনকি শাহজাহানপুর ভোটকেন্দ্রে তার নিজের পরিবারের লোকদের বা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের কাউকেই এক নজর দেখা গেল না।
‘তাহলে কি তারা (বিএনপি) শুধু অভিযোগ তোলার জন্যই নির্বাচনী দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন?’--এমন প্রশ্ন করেছেন সাধারণ ভোটারদের অনেকেই। এ প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ ভোটারদের কেউ কেউ এ নিয়ে বেশ ক্ষোভও প্রকাশ করলেন। বলা বাহুল্য, তাদের মধ্যে মির্জা আব্বাসের সমর্থকও ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েই মেয়র নির্বাচনে নিজের দায়িত্ব শেষ করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিতে একের পর এক আসতে থাকেন দলের শীর্ষ নেতারা। অথচ বেশিরভাগ সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতেও তাদের বেশিরভাগেরই দেখা মেলে না।
যাহোক, সংবাদ সম্মেলনে চেয়ার নিয়ে হয়ে গেল এক পশলা কাড়াকাড়ি। আগেভাগে চেয়ার দখল করে বসে আছেন দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরা। নেতাদের দেখেও তাদের চেয়ার চাড়ার নামটি নেই। তাদের উঠিয়ে দেওয়াই হলো উঠলো বড় দায়। বিশৃঙ্খলার একশেষ।
সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছেন। চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান চেয়ারে উপবিষ্টদের জনেজনে জিগ্যেস করে জেনে নিচ্ছেন কে সাংবাদিক আর কে দলের কর্মী্। এনিয়ে মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে তার একপ্রস্থ তর্কাতর্কিও হয়ে গেল। পরে মিডিয়ার সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে মিটমাটও হলো।
সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই সুমসাম হয়ে পড়ল বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসটি। নিমেষে সবাই উধাও।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
সম্পাদনা:জেএম