ঢাকা: আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরকে ‘সন্ত্রাসী’ অাখ্যা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বদলে যাওয়া আ জ ম নাছিরকে গ্রহণ করছে জনগণ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামবাসী।
সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম রহিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এম মনজুর আলম একজন ব্যর্থ মেয়রের নাম। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর গড়া সিটি করপোরেশনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন তিনি। এক সময় জামালখানকে নগরীর হেলদি ওয়ার্ড বলা হতো। সেই জামালখান এখন নোংরা আবর্জনায় ভরা। অনেক স্থানে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়।
তিনি বলেন, আপনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সবাই এক কথাই বলবেন। মনজুর প্রশাসক হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থ। জলাবদ্ধতা দূর করার কথা বলে এসে দুর্ভোগ বাড়িয়েছেন।
লিটন নামের একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক, বাস ড্রাইভার নুরুল আমিন, চা দোকানি আমিনুল ইসলাম এমনকি সিটি করপোরেশনের একজন পরিচ্ছন্নকর্মীর কাছে প্রশ্ন ছিল মেয়র হিসেবে মনজুর কেমন ছিলেন।
এক কথায় উত্তর পাওয়া গেছে, মানুষ হিসেবে ভালো। কারো উপকার হয়তো করেননি, কিন্তু ক্ষতিও করেন নি। কিন্তু মেয়র হিসেবে ব্যর্থ। কাজ না করলেও কাউকে জোর গলায় কিছু বলতেন না। কিন্তু এমন নরম লোক দিয়ে প্রশাসন চলে না।
নগরবাসী বলেন, সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে নেওয়া দূরের কথা, অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। নগরীতে নারীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস ছিলো। মনজুর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বাসগুলো রাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় বেশকিছু মাতৃ ও শিশুসদন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেগুলো বন্ধ করে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন পরিচালিত ওষুধ কোম্পানিকে একটি এনজিও’র কাছে লিজ দিয়েছেন মনজুর। পানি বোতলজাতকরণ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ৪০ লিটার পানি বিক্রি করা হতো ১৬ টাকায়। নগরীরবাসীর কাছে এসব এখন স্বপ্নের মতো মনে হয়।
জলাবদ্ধতা নিয়ে ব্যর্থতা ঢাকতে মেয়র মনজুর বলতেন, সরকার তাকে সহায়তা করেনি। এ কারণে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। টাকার অভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন এলে তার বক্তব্য আষাঢ়ে গল্প বলে প্রমাণিত হয়ে যায় নগরবাসীর কাছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছেন, ১৬ বছরে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সরকারি সহায়তা পেয়েছিলেন সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা। আর এম মনজুর মাত্র সাড়ে ৪ বছরে তার সমপরিমাণ ৫’শ কোটির মতো পেয়েছেন।
ব্যর্থতার পাল্লা যখন আকাশচুম্বি সেই ব্যক্তি মনজুর আবার প্রার্থী হয়েছিলেন মেয়র পদে। এবারে তার টার্গেট ছিলো নাছিরকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। তার প্রধান বক্তব্য ছিলো, ‘নাছির মেয়র হলে চাঁদাবাজি বেড়ে যাবে। আমাকে ভোট দিন, শান্তিতে থাকতে পারবেন’।
কিন্তু মনজুরের এই চাতুরতা ভালো ভাবে নেননি নগরবাসী। তারা বলেছেন, হ্যাঁ, নাছির তরুণ বয়সে যখন ছাত্রনেতা ছিলেন, তখন তার সম্পর্কে অনেক অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেই নব্বই দশকের নাছির আর আজকের নাছিরের মধ্যে বিশাল ফারাক।
১০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের দু’দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার রোজা রাখেন। নির্বাচনী প্রচারণাতেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মসজিদে গিয়ে। এসব কারণেও ব্যর্থ মনজুরকে ছেড়ে নাছিরের পক্ষ নেন ভোটাররা।
এ ছাড়া মনজুর আশা করেছিলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে নাছিরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাঁধে সওয়ার হয়ে নগরপিতা হবেন। কিন্তু সরকারি দলটির কেন্দ্রের কড়া হুঁশিয়ারি সেই আশায় ছেদ পড়ে। সেই সঙ্গে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকে চট্টগ্রামবাসী ভালোভাবে মেনে নেননি।
অন্যদিকে উড়ে এসে জুড়ে বসা মনজুরকে বিএনপির অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি না ছিলেন বিএনপির না আওয়ামী লীগার। চট্টগ্রামে একটি কথা প্রচলিত আছে। তা হচ্ছে, মনজুর দিনে বিএনপি আর রাতে আওয়ামী লীগার হয়ে যান। তাকে বর্ণচোর বলতেন কেউ কেউ।
মনজুরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছেন, মনজুর মেয়র হোক বিএনপির অনেক নেতাই চাননি। কারণ, তারা মনে করছিলেন, মনজুর মেয়র হলে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতি তাদের হাতে চলে যেতে পারে। সেই সঙ্গে খসরু, নোমানদের প্রতিপ্রত্তি হ্রাস পেতে পারে। এ শঙ্কায় শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির অনেকেই সরে পড়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন মনজুরের লোকজন।
যা ভোটের দিন সকালেই আঁচ করতে পারেন মনজুর। তাই কেন্দ্র বিএনপির দিকে না তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন বর্জন করেন। কথিত আছে, খানিকটা চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাদের অতি উৎসাহের কারণেও নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হন তিনি। তাই অভিমানে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন মনজুর।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
এসআই/এএসআর
** হতাশা থেকে রাজনীতি ছাড়ায় স্তম্ভিত চট্টগ্রাম