ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মাহী বি. চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আবদুল্লাহ আল ক্বাফি, গোলাম মওলা রনি, নাদের চৌধুরীসহ মোট ৪২ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। কেননা, তারা আইনে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেছেন, যেসব প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট না পাবেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন বিধিমালায় নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৪১’র উপবিধি ৩ অনুযায়ী, ‘ভোটগ্রহণ বা ভোটশেষ হওয়ার পর যদি দেখা যায়- কোনো প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ অপেক্ষা কম ভোট পেয়েছেন, তাহলে তার জামানতের টাকা সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে’।
ঢাকা উত্তর
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৫৭টি ভোট।
ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে তাবিথ আউয়াল ও আনিসুল হক ছাড়া কোনো প্রার্থীই ২০ হাজারের বেশি ভোট পায়নি। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, ডিএনসিসির ১৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৪ প্রার্থীই তাদের জামানত হারাচ্ছেন।
উত্তরে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে তারা হলেন- আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, চৌধুরী ইরান আসাদ সিদ্দিকী, নাদের চৌধুরী, বাহাউদ্দিন আহমেদ সরকার, মাহী বি. চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মো. আনিসুজ্জামান খোকন, মো. জামান ভূঁইয়া, মো. জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকি, মো. শামসুল আলম চৌধুরী, ফজলে বারী মাসউদ ও শেখ শহিদুজ্জামান।
এরমধ্যে তাদের ভোট সংখ্যা- মাহী বি. চৌধুরী (ঈগল) ১৩৪০৭, জোনায়েদ সাকি (টেলিস্কোপ) ৭৩৭০, ক্বাফি (হাতি) ২৪৭৫, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল (চরকা) ২৯৫০, নাদের চৌধুরী (ময়ূর) ১৪১২, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (ক্রিকেট ব্যাট) ১২১৬, কাজী মো. শহীদুল্লাহ (ইলিশ) ২৯৬৮, শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (কমলা লেবু) ১৮০৫০, শামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ) ৯৮২, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাক্স) ১০৯৫, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী (লাউ) ৯১৫, মো. আনিসুজ্জামান খোকন (ডিশ এন্টেনা) ৯০০, মো. জামান ভূঞা (টেবিল) ১১৪০ এবং শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই) ৯২৩ ভোট পেয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৯ লাখ ৫ হাজার ৪৮৪টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৮৫ ভোট। কিন্তু দক্ষিণে মেয়র প্রদে ২০ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে মির্জা আব্বাস ও সাঈদ খোকন ছাড়া কোনো প্রার্থীই লাখের ঘর অতিক্রম করতে পারেননি। ফলে অবশিষ্ট ১৮ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।
যেসব প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ ভোট পাননি, তারা হলেন- আবদুর রহমান, এ এস এম আকরাম, আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আয়ুব হোসেন, এস এম আসাদুজ্জামান রিপন, দিলীপ ভদ্র, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মশিউর রহমান, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, হাজি মো. সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মো. আবদুল খালেক, মো. গোলাম মাওলা রনি, মো. জাহিদুর রহমান, মো. বাহারানে সুলতান বাহার, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, মো. শহীদুল ইসলাম ও শাহীন খান।
দক্ষিণে প্রার্থীদের ভোট সংখ্যা- ফ্লাস্ক প্রতীকে আব্দুর রহমান ১৪,৭৮৪ ভোট, সোফা প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন ৪৫১৯ ভোট, চরকা প্রতীকে আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন ২,১৯৭ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে রেজাউল করিম চৌধুরী ২,১৭৩ ভোট, জাহাজ প্রতীকে শাহীন খান ২,০৭৪ ভোট, আংটি প্রতীকে গোলাম মওলা রনি ১,৮৮৭ ভোট, বাস প্রতীকে শহীদুল ইসলাম ১,২৩৯ ভোট ও টেবিল প্রতীকে সিপিবি-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ ১,০২৯ ভোট পেয়েছেন। ল্যাপটপ প্রতীকে জাহিদুর রহমান ৯৮৮ ভোট, কমলা লেবু প্রতীকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ৯২৮ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে এ এস এম আকরাম ৬৮২ ভোট, হাতি প্রতীকে দিলীপ ভদ্র ৬৬৯ ভোট, কেক প্রতীকে আব্দুল খালেক ৫৫০ ভোট, ময়ূর প্রতীকে শফিউল্লাহ চৌধুরী ৫১২ ভোট, চিতা বাঘ প্রতীকে মশিউর রহমান ৫০৮, লাউ প্রতীকে মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ৩৬২ ভোট, ঈগল প্রতীকে আয়ুব হোসেন ৩৫৪ ভোট এবং শার্ট প্রতীকে বাহরানে সুলতান বাহার ৩১৩ ভোট পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫৮৩ ভোট। কিন্তু এ নির্বাচনে আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ মনজুর আলম ছাড়া বাকি ১০ প্রার্থীর কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ ভোট পাননি। ফলে তাদেরও জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।
যারা জামানত হারাচ্ছেন, এমন প্রার্থীরা হলেন- আরিফ মইনুদ্দীন, এম এ মতিন, শফিউল আলম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী, মো. ওয়াজেদ হোসেন ভূইয়া, মো. সোলায়মান আলম শেঠ, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, সাজ্জাদ জোহা ও হোসাইন মো. মুজিবুল হক।
চট্টগ্রামে আ. জ. ম নাসির এবং মনজুরের বাইরে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে চরকা প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন ১১,৬৫৫ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া ৯,৬৬৮ ভোট, ডিশ অ্যান্টেনা প্রতীকে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ৬,১৩১ ভোট, ময়ূর প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক শুক্কুর ৪,২১৫ ভোট, ফ্লাক্স প্রতীকে সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি ২,৬৬১ ভোট এবং টেলিস্কোপ প্রতীকে গাজী মো. আলাউদ্দিন ২,১৪৯ ভোট পেয়েছেন। বাস প্রতীকে বিএনএফের আরিফ মঈনুদ্দিন ১,৭৭৪ ভোট, দিয়াশলাই প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ ১,৩৮৫ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ৮৪৫ এবং মাছ প্রতীকে শফিউল আলম ইলিশ ৬৮০ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২০ লাখের কম হলে মেয়র প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখের বেশি ভোটার হলে ১ লাখ টাকা জামানত দিতে হয়। এক্ষেত্রে উত্তরের ১৪ প্রার্থীকে ১ লাখ টাকা করে বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া চসিক ও ঢাকা দক্ষিণের ২৮ প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
ইইউডি/আইএ