ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

জীবনে নির্মম শিক্ষার দরকার ছিল: রনি

শাহজাহান মোল্লা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
জীবনে নির্মম শিক্ষার দরকার ছিল: রনি গোলাম মওলা রনি

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারানোর পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি। প্রতিক্রিয়ার এক পর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বললেন, ‘দক্ষিণবঙ্গে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য ঢাকায় মেয়র নির্বাচন করে পেলাম ১ হাজার ৮৬১ ভোট।

আমার জীবনে নির্মম শিক্ষার দরকার ছিলো। সে শিক্ষা হলো। ’ এসময় মেয়র পদে তাকে প্রত্যাখ্যান করা ডিএসসিসির বাসিন্দাদের গালমন্দও করেন রনি।
 
নির্বাচনের পরদিন বুধবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা হয় আংটি প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া রনির। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ভোটার ও জনগণকে ‘বজ্জাত, আহাম্মক’ এমনকি কিছু অকথ্য ভাষায়ও গালমন্দ করেন তিনি।

বাংলানিউজ:  সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শেষ হলো। আপনি ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?
 
রনি: যা হয়েছে ভালো হয়েছে। আমাদের জনগণ যেরকম, সেরকম নেতা নির্বাচিত হয়েছে। নেতা নির্বাচিত হয় আল্লাহর তরফ থেকে। আমাদের জনগণ যে রকম বজ্জাত, সেরকম নেতাই নির্বাচিত হয়েছেন। বজ্জাত জনগণের শাসন করতে সাধু, সন্ন্যাসী দিয়ে তো হবে না। তাই বজ্জাত নেতাই এই জনগণের জন্য ভালো।
 
বাংলানিউজ: ঢাকার দুই সিটিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, আপনার দৃষ্টিতে তারা কেমন?

রনি: মন্দের ভালো। সরকারি দল জোরাজুরি করে ব্যালটে সিল মেরে নিয়েও ভালো করেছে। যদি না করতো তাহলে বিএনপি জিতে যেতো।

বাংলানিউজ: বিএনপি প্রার্থী জিতলে কী ক্ষতি হতো?

রনি: বিএনপি যে প্রার্থী দিয়েছে তাদের তুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যোগ্য এবং ভালো। তারা ভালো কাজ করতে পারবে। কিন্তু জনগণকে যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে ভালো লোকের পরিবর্তে মন্দ লোক নির্বাচিত হতো। তারা কোনো কাজও করতে পারতো না। এটা মন্দের ভালো হয়েছে।
 
বাংলানিউজ: সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার মেয়র নির্বাচন করতে গিয়ে হারলেন, কীভাবে দেখছেন?

রনি: আমাদের জনগণের যে চরিত্র-আশা-আকাঙ্ক্ষা ঠিক সেভাবেই হয়েছে। আমি সাকি, মাহী- আমাদের মতো লোকের দরকার ছিলো না।
 
আমরা যে একটা প্রার্থী, দেশের কোনো বুদ্ধিজীবী তা একবারের জন্যও মনে করলেন না। আমাদের ভোটাররাও মনে করেননি- আমরা নেতা হতে পারি।   আমাদের চিন্তা-চেতনা, আমরা যে ভালো কথা বলি...। আমরা হলাম- যাত্রাদলের ‘নটি’ বা ‘নটরাজ’।
 
নটরাজ বা নটি, বিনোদনী শুনতে ভালো শোনায়, যখন লিখি ভালো লাগে। আমরা হলাম নটি, বিনোদনী, হরবোলা। এরা যে নেতা হতে পারে, এটা জনগণ মনেই করে না। তাদের মতে- নেতা হতে পারে আব্বাস, তাবিথ, আনিসুল হক। তাই ভালোই  হয়েছে।
 
বাংলানিউজ: এ নির্বাচনে পর রাজনীতির গতিপথ কী হতে পারে?
 
রনি: আমাদের দেশের রাজনীতি আরও খারাপ হবে। আমাদের জনগণ খারাপ, জনগণ বজ্জাত। আর এদের জন্য বজ্জাত নেতা দরকার। সাধু-সন্ন্যাসী দিয়ে বজ্জাত জনগণের শাসন করা যাবে না।

আজ শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার চরিত্র আমাদের জাতীয় চরিত্র। জাতীয় চরিত্রের এক্সট্রিম পর্যায়ের কারণে আল্লাহ তাদের নেতা নির্বাচিত করেছেন। এই জাতিকে কীভাবে ঠ্যাংগাইতে হবে- এরা ভালো জানেন, খুব ভালো জানেন।
 
আবার খালেদা জিয়াকে যত খারাপই বলি, আজ যদি তিনি রাস্তায় নামেন তার জন্য যত লোক দাঁড়াবে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাঁড়ালে তত লোক আসবে না। শেখ হাসিনাকে যতই গালিগালাজ করা হোক, তিনি রাস্তায় নামলে লোকের অভাব হয় না।

বাংলানিউজ: নির্বাচন করে জামানত হারালেন! কী বলবেন?

রনি: সারাজীবন অল থ্রো ফার্স্ট ক্লাস। আমার কারখানায় পাঁচ হাজার লোক কাজ করে। সাত বছর সততার সঙ্গে কাজ করার পর ঢাকার রাস্তায় নেমে নির্বাচন করে জামানত হারালাম। এর চাইতে বড় পাওয়ার কী আছে?
 
আমি বিভিন্ন সময় সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার দুঃসাহস দেখিয়েছি। সেই আমিই জামানত হারালাম। যেখানে অনেক ‘বীর’ মন্ত্রী, এমপি একজন ওসিকে দেখলে সাত বালতি পানি খায়, সেখানে আমি ওসিকে ধমক দেওয়ার সাহস দেখিয়েছি। আর আমার জামানত হারাতে হলো। তারপরও এক হাজার ৮৬১ জন ভোটার আমাকে ভোট দিয়েছে। যারা আমাকে ভোট দিয়েছে, তারা কত বড় ভোটার, আর আমি কত বড় নেতা?
 
সদ্যসমাপ্ত ডিএসসিসি নির্বাচনে আংটি প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক এই এমপি।   নবম  জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাচারিতার বিভিন্ন পর্যায়ে জনগণকে গালমন্দের ব্যাপারে দম্ভোক্তি করে রনি বলেন, ‘আমি যা বলছি, লিখতে পারবেন এগুলো সুন্দর করে?’

বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
এসএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।