ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করা হবে বলে বলেও জানান তিনি।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়কে গণতন্ত্রের বিজয় ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে জনরায় বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার (এপ্রিল ২৯) রাতে গণভবনে ঢাকার নবনির্বাচিত দুই মেয়র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী হওয়ার জন্য ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে অভিনন্দন জানান।
এ সময় দুই মেয়রের পরিবারের সদস্যরাসহ আওয়ামী লীগের র্শীষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিলে প্রায় ২৭শ কেন্দ্র। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে ৪০-৫০ টাতে কিছু কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। কয়েকটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আর কয়েকটিতে কিছু সময়ের ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল, পরে আবার ভোটগ্রহণ করা হয়। এ নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে সমস্যা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করব, খতিয়ে দেখব। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আমার হাতে আসবে। কে কত ভোট পেয়েছে তা দেখতে পারব।
জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এ নির্বাচন গণতন্ত্রের বিজয়, জনমানুষের বিজয়। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিজয়। এটা হচ্ছে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে জনরায়।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন শুরুর মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরই নির্বাচন বর্জন করে ফেললো। উত্তরে তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছে, মির্জা আব্বাস পেয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট। নির্বাচনে যদি কারচুপি হয় তবে এত অল্প সময়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এতো ভোট পেলে কিভাবে? কারচুপি হয়েছে বলে যারা পত্রিকায় বড় বড় হেড লাইন দিয়েছে তাদেরও এর জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণে ৪৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, উত্তরে ৩৭ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতো কম ভোট কাস্ট হয়েছে। তাহলে কারচুপি হলো কিভাবে?
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে কারচুপির ক্ষেত্রে বিএনপির অতীত ইতিহাস তুলে ধরেন।
হরতাল-অবরোধে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি থেকে ৯২ দিন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে বিএনপি-জামায়াত। যারা আগুনে পুড়েছে তাদের কি করুণ অবস্থা। তাদের তো চেহারা দেখা যায় না। এদের মধ্যেও তো সেরকম লোকও আছে যারা বিএনপিকে ভোট দেয়। এসব মানুষের কথা তো তারা বলে না। তাদের কথা ভাবেও না। এদের তারা মানুষ হিসেবে ভাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে যারা মানুষ পুড়িয়েছে জনগণ তাদের ভোট দিবে কি করে। কোনো বিবেকবান মানুষ তাদের ভোট দিবে না। তারপরও তারা ভোট পেয়েছে। মির্জা আব্বাস পেট্রোলবোমা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাবিথের বাবা টাকা দিয়েছে। তারপরও তারা অনেক ভোট পেয়েছে।
নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো কারণ ছিলো না। আসলে তাদের নির্বাচন বর্জনটা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত।
তিনি বলেন, নির্বাচন কারচুপির যে অভিযোগ দিয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গেলো, কিন্তু কোন কেন্দ্রে কারচুপি হয়েছে তারা সেটা বলতে পারেনি। তারা কোনো একটা জায়গা দেখাতে পারেনি, ওমুক জায়গায় নির্বাচনের কারচুপি হয়েছে।
অনেকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকুক এটা অনেকে চায় না। যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের একটা উদ্দেশ্য আছে। গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহত হলে তারা পতাকা পাবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে মিডিয়ার ভূমিকা রাখা উচিত।
শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অনুষ্ঠানে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু করার চেষ্টা করেছি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন হলে নির্বাচন আরো সুষ্ঠু হতো। ২০০৮ সালে আমরা এটা চেয়েছিলাম। আমাদের আরো প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া উচিত, তাহলে নির্বাচন আরো সুষ্ঠু হবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে পরে সংবর্ধনা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
** এ বিজয় গণতন্ত্র ও গণমানুষের বিজয়
** প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে ঢাকার দুই মেয়র
** যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি বাস্তবায়ন করবো
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
এমইউএম/এসআর