ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সিটি নির্বাচন

ফল পূর্বনির্ধারিত দাবি ৪ প্রার্থীর

শাহজাহান মোল্লা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
ফল পূর্বনির্ধারিত দাবি ৪ প্রার্থীর ছবি: মাহী বি চৌধুরী, জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি, গোলাম মওলা রনি এবং আব্দুল্লা আল ক্বাফী

ঢাকা: ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন চার মেয়র প্রার্থী। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ফলাফল পূর্বনির্ধারিত।



নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী গোলাম মওলা রনি, উত্তরের মেয়র প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী, জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি এবং আব্দুল্লা আল ক্বাফীর (ক্বাফী রতন) সঙ্গে।
 
এই চার প্রার্থীর প্রত্যেকেই নির্বাচন কমিশনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করেছেন। পাশাপাশি এটা পূর্ব নির্ধারিত ফল ছিল বলেও দাবি তাদের।

তবে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই চার প্রার্থীই তাদের জামানত হারিয়েছেন।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতার কিছু  অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
 
ঢাকা উত্তরে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল, নাম্বারগুলো প্রত্যাখান করছি। কিন্তু আমি বাস্তবতা বুঝি। রাজনীতির বাস্তবতা বুঝি।
 
তিনি বলেন, বেলা ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন  মোটামুটি ঠিকই ছিলো। বিএনপি  বেলা ১২টার দিকে নির্বাচন বর্জন করে।   নির্বাচন বর্জন করার পর নির্বাচন অন্যদিকে গেছে। তখন আর নির্বাচন বলা যায় না। তবে বিএনপির নির্বাচন বর্জন তাদের নিজস্ব ব্যাপার বলেন তিনি।
 
নিজের জামানত বাজেয়াপ্তের বিষয়ে বলেন, সবারইতো হারিয়েছে। এ নিয়ে আর কি বলার আছে।
 
ঢাকা উত্তরে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি। টেলিস্কোপ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তার দৃষ্টিতে কেমন ছিলো এই নির্বাচন। বাংলানিউজকে জোনায়েদ সাকি বলেন,  নির্বাচন কমিশন যে ফলাফল ঘোষণা করেছে তা একটা সাজানো শিট। কাকে কত ভোট দেওয়া হবে পুরোটা সাজানো।
 
সাকি বলেন, বিএনপি ভোট বর্জন করলো ১২টায়। ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ একটা কেন্দ্রে পরিদর্শন করে বললেন এখানে ৫ শতাংশ ভোট পরেছে । এরপর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির প্রার্থীরা এতো ভোট কিভাবে পেলেন?
 
তিনি বলেন, বিএনপির তিন প্রার্থীর এতো ভোট পেছনে যে আওয়ামী লীগ ছিল মেরেছে তা প্রমাণিত। তারা টেবিল ঘড়িতে ২০০ মারলে ১০০ বাসে মেরেছে।
 
সাকি বলেন,  নির্বাচন কমিশন বোঝাতে চেয়েছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় হয়েছে ঘাড়ে-ঘাড়ে। এটা করতে গিয়ে তারা জামানত হারানো বিষয়টা কাজে লাগিয়েছে। বিএনপির জানামত হারালে তো নির্বাচন থাকে না? সেই কারণে এটা একটা সাজানো ফলাফল।
 
তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম পরিবর্তনের ডাক দিয়ে। আমাদের ভোট গণনার মধ্যেই নেয় নাই ইসি। এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, এখানে আসলে পরিবর্তনের পক্ষে মানুষ জায়গা নেই। কাকে কত ভোট দেওয়া হবে পুরোটা সাজানো শিট। সাজানো ফলাফল প্রত্যাখান করেছি। এটার সঙ্গে জামানত বাজেয়াপ্ত হলো, না কি রক্ষা পেল এটা ব্যাপার নয়।
 
ঢাকা সিটিতে নির্বাচিত দুই মেয়র প্রার্থী সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, একটা অগণতান্ত্রিক  নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে সাজানো ফলাফলের মধ্যে দিয়ে যারা নির্বাচিত হলেন তারা জনগনের পক্ষে কি কাজ করতে পারবেন সন্দেহ হয়। অগণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো গণতান্ত্রিক বা ন্যায়সঙ্গত কাজ হবে না। তাই আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখব।
 
রাজনীতির ভবিষৎ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের এই নেতা বলেন, আমি আগেই বলেছি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে রাজনীতির সংকট ঘণীভূত হবে। এটা থেকে বের হওয়ার কোনো পথ দেখছি না।
 
সিপিবি-বাসদ সমর্থিত অপর মেয়র প্রার্থী আব্দুল্লা আল ক্বাফীর (ক্বাফী রতন) চোখে এই নির্বাচন কেমন ছিল।
 
বাংলানিউজকে ক্বাফী রতন বলেন, নির্বাচনের ফল গণনা করে নির্ধারিত হয়নি, ফল পূর্ব নির্ধারিত। কেননা বিএনপি ১২টার সময় নির্বাচন বর্জন করার পরে কি করে এতো ভোট পেল? এই নির্বাচনে ১০ টা ভোট ঘড়িকে দিলে ৬টা বাসকে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা ফলাফল প্রত্যাখান করেছি। আমরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্ত পারিনি।
 
নিজের জামানত হারানোর বিষয়ে বলেন, নির্বাচনের প্রথম দিনেই আমি  জানি জামানত হারাবো। ৮ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত থাকবে না এটা আমার জানাই ছিলো।   তারপরেও নির্বাচনে ছিলাম। দ্বি-দলীয় ধারা পরিবর্তন হতে হলে অনেক সময় লাগবে।
 
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা সরকার দলের বিপক্ষে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেছি, সেই কারণে অপদস্থ করার জন্য যে ভোটগুলো মানুষ দিয়েছে সেগুলো কাউন্ট করা হয়নি। একটা মনগড়া ন‍াম্বার প্রকাশ করা হয়। এই নির্বাচন কমিশন একটা অথর্ব নির্বাচন কমিশন। আমরা প্রধান নির্বাচন  কমিশন‍ারের পদত্যাগ চেয়েছি।
 
তারপরেও যারা নির্বাচিত হলেন তাদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ক্বাফী রতন বলেন, আনিসুল হকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছি না। যদিও তার কিছুটা সততার অভাব রয়েছে স্বঘোষিত। তিনি (আনিসুল হক) সরকারি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন।
 
তবে তার কাজ করার যোগ্যতা আছে। আনিসুল হকের সার্বক্ষনিক মেয়র হিসেবে কাজ করার ঘোষণা উল্লেখ করে বলেন, তিনি (আনিসুল) সার্বক্ষণিক মেয়র হিসেবে কাজ করতে হলে তাকে তার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পদ ছাড়তে হবে। পাচ বছর সার্বক্ষণিক মেয়র হিসেবেই কাজ করতে হবে। তাহলে ঢাকার পরিবর্তন আনা সম্ভব।   
 
এদিকে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী গোলাম মওলা রনি নির্বাচন প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেছেন,  যা হয়েছে ভালো হয়েছে। আমাদের জনগণ যেরকম, সেরকম নেতা নির্বাচিত হয়েছে। নেতা নির্বাচিত হয় আল্লাহর তরফ থেকে। আমাদের জনগণ যেরকম বজ্জাত, সেরকম নেতাই নির্বাচিত হয়েছেন। বজ্জাত জনগণের শাসন করতে সাধু, সন্ন্যাসী দিয়ে তো হবে না। তাই বজ্জাত নেতাই এই জনগণের জন্য ভালো। যেটা  হয়েছে মন্দের ভালো।

এ চার প্রার্থীর মধ্যে রনির নির্বাচনী প্রতীক ছিলো আংটি, মাহী বি চৌধুরীর ঈগল, সাকীর টেলিস্কোপ এবং কাফী রতনের হাতি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এসএম/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।