ঢাকা: তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ‘নেতিবাচক’ হলে আন্দোলনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিলো বিএনপির। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তারা।
এই মুহূর্তে আন্দোলনের চেয়ে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক নেতাদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। ফলে শীর্ষ নেতাদের ‘মুক্তির’ আগ পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি না আসার সম্ভাবনাই বেশি।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ‘নাশকতানির্ভর ব্যর্থ আন্দোলন’ থেকে বের হতে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে নিয়েছিলো বিএনপি। দলটির ধারণা ছিলো, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও ইতিবাচক ফল আসবে। আর যদি তা না হয়, স্বল্প মেয়াদে আরেক দফা কঠোর কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পাবে তারা।
কিন্তু তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিএনপির সব পরিকল্পনাকে ওলট-পালট করে দিয়েছে। দলটি এখন আক্রমণের চেয়ে আত্মরক্ষার কৌশলকেই প্রধান্য দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোট পর্যবেক্ষণে নয়াপল্টনে কেন্দ্রী কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়, শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাসভবন এবং মহাখালীতে অ্যাঙ্কর টাওয়ারে ‘মনিটরিং সেল’ স্থাপন করে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
পাশাপাশি প্রতিপক্ষের কেন্দ্র দখল ঠেকাতে ও দল সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র ছাড়া করার পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতি কেন্দ্রে অন্তত দুই শ’ নেতা-কর্মীকে সংগঠিত ও সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু ভোট গ্রহণের শুরু থেকে বর্জনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি।
কেন্দ্রের বাইরে ‘স্লিপক্যাম্প’ স্থাপন, সেখানে কর্মী নিয়োগ, এমনকি পূর্বনির্ধারিত পোলিং এজেন্টদেরও কেন্দ্রে আনতে পারেনি বিএনপি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের মাঠে সংগঠিত কিছু ‘অনিয়ম’ ও ‘জালিয়াতিকে’ সামনে এনে এবং ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা আড়ালের চেষ্টা করলেও আন্দোলনের জন্য নির্বাচনকে জোরালো ইস্যু বানানোর নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে বিএনপি। ফলে এই মুহূর্তে নির্বাচনকে ইস্যু করে আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে না তারা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১২টায় ভোট বর্জনের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তাবিথ আউয়ালের নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, ভোট বর্জনের পাশাপাশি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করবেন কি না?
এ সময় খালেদা জিয়া তার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, আপাতত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করার দরকার নেই। ভোট বর্জনের ঘোষণাটাই কেবল দেওয়া হোক।
জানা গেছে, সাধারণ ভোটাররা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিলেও দলের নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতি বিএনপি প্রধানকে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি ঘোষণার মতো ‘হঠকারি’ সিদ্ধান্ত নিতে চান না তিনি।
অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জমান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ পর্যায়ের অসংখ্য নেতা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন আত্মগোপনে।
আটক নেতাদের মুক্তি ও আত্মগোপনে থাকা নেতাদের ঘরে ফেরাতে তাদের জন্য আইনি লড়াই চালানোর বিষয়টিকে মুখ্য বিষয় হিসেবে দেখছে বিএনপি। এ কারণেই আপাতত আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে না তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনের সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি হয়নি। সুতরাং আন্দোলনের ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো আপডেট নেই।
সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে আন্দোলনে না নামলেও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রে সংগঠিত সংঘর্ষ ও অনিয়মের ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ছবি সংগ্রহ করেছে দলটি। এগুলো ফাইল করে বিদেশি বন্ধু ও দূতাবাসগুলোকে সরবরাহ’র কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা। তিন সিটি নির্বাচনকে জোরালো ইস্যু বানানোর সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এজেড/জেডএম