ঢাকা: শ্রমিকদের কল্যাণে আরও নিবেদিত হতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘আপনারা শ্রমিকদের মর্যাদা ও কল্যাণে আরও বেশি নিবেদিত হবেন।
মহান মে দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (০১ মে) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
যুদ্ধ ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা শ্রমিকদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মালিক শ্রমিক সু-সর্ম্পকের ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মালিকরা অর্থ দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানে শ্রম-ঘাম দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে রাখে, অর্থ উর্পাজনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় শ্রমিক শ্রেণী। কাজেই এ ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিক উভয়েরই একটা সুসর্ম্পক থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। ’
শ্রমিক মালিক সু-সর্ম্পক থাকলে উৎপাদন ও উর্পাজন বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন তিনি।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়নকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা আছে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন মানে এই নয়, শুধু শ্রমিকদের উস্কে দেবে। আর শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে যেই শিল্প তার উর্পাজনের পথ করে দেয় সেটাকে ধ্বংস করবে। এ ধরনের কাজে আমাদের শ্রমিকরা লিপ্ত হবে না। এটাই আমি চাই। ’
‘দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবেন। দেশের স্বার্থ, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সেটাও বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন। এটা আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।
শ্রমিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে, শিল্প ঠিকে থাকলেই কেবল আপনাদের কর্মসংস্থান হবে। দারিদ্র্য হবেন না, প্রতিষ্ঠান ও দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে আমি সব শ্রমিকের প্রতি আহ্বান জানাই।
সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কী শুধু মানুষের কাছে হাত পেতে চলবে। শুধু দারিদ্র্য হিসেবে করুণা ভিক্ষা করবে? না আমরা তা চাই না! আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির যেমন প্রয়োজন তেমনি শিল্পেরও প্রয়োজন আছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন বাড়াতে হবে, এর মান বাড়াতে হবে। রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের জন্য গার্মেন্টস শিল্পপল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিকাশে স্বল্প সুদে ঋণও দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার যখন দেশের ও শিল্প এবং শ্রমিকের উন্নয়নে বিরামহীন কাজ করছে, যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠছে- তখন বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোল বোমা মেরে, বাসে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, যার অধিকাংশই শ্রমিক। ছোট শিশুও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে ৫৩০০ উন্নীতকরণ, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং প্রথা চালু, শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র, স্কুল, হাসপাতাল, ডরমেটরি নির্মাণ, জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১, কারখানায় কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিদর্শক নিয়োগসহ শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের জন্য। এ রাজনীতি আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিখেছি। ’
‘সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ সব সময় এদেশের মেহনতি মানুষের পাশে ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে,’ উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি তপন চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেকটর শ্রীনিবাস বি. রেড্ডি, শ্রমিক লীগ সভাপতি শক্কুর মাহমুদ প্রমুখ।
** মে দিবসের ছুটি বঙ্গবন্ধুই ঘোষণা করেছিলেন
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৫
এমইউএম/এমএ