রাজশাহী: নাশকতার মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন। পুলিশের আবেদনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বাংলানিউজ।
সিটি করপোরেশনের ওই সূত্রটি জানান, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অপসারিত হচ্ছেন। যে কোনো মুহূর্তে অপসারণের আদেশ জারি হতে পারে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল মেয়ররা দায়িত্ব পেতে পারেন। সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করায় পুলিশের আবেদনের পর তাকে সাময়িক অপসারণের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, গত ২৩ এপ্রিল বুলবুলকে অপসারণের যাবতীয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন প্যানেল মেয়র বা সিনিয়র একজন কাউন্সিলর মেয়রের দায়িত্ব পাচ্ছেন। স্থানীয় সরকারের আইনে (সিটি করপোরেশন) যে কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় আদালত চার্জশিট গ্রহণ করলে তাকে সাময়িক অপসারণের বিধান রয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১২তে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্তকরণের বিষয়টি এতে উল্লেখ করা হয়েছে। নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় রাজশাহী সিটি মেয়র পলাতক রয়েছেন।
রাজশাহীতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে নাশকতা, সহিংসতা, জানমাল ও সম্পদ বিনষ্টে ভয়াবহতা এবং বিস্ফোরক আইনে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী মডেল থানায় কয়েকটি মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া চারটি মামলার চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেন। সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমেদ বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। এতে মেয়র বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকরণের প্রস্তাবনায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘যে ক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলরগণের অপসারণের জন্য ধারা-১৩-এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমতে, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।
এ প্রেক্ষিতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পিতা মৃত আ. রশিদ, সাং-উপশহর, থানা-বোয়ালিয়া মহানগর রাজশাহী, এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে বিধায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯এর ১২৯(১) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এগুলো হলোÑ মামলা নং ৩৮, এটি ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দায়ের করা হয়। ধারা ১৪৭/১৪৮/১৪৮/১৮৬সহ আরও কিছু ধারা। গত ২৫ মার্চ আদালত এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। মামলা নং-৩৭, ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দায়ের করা হয়। ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানবলী আইনের ৩ ধারায় মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টম্বর এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে। মামলা নং-৪১, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করা হয়। ধারা ১৪৩/১৫৩/৩৩২/৪২৭/৩৪ দঃবিঃ। এই মামলায় ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। মামলা নং-০৮, এটি ২০১১ সালের ৪ দায়ের করা হয়। ধারা, ১৪৩/১৫২/১৫৩সহ আরো ধারা রয়েছে। ২০১৪ সালের ১০ মার্চ আদলত চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি মেয়র বুলবুলের বরখাস্তের আদেশ চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার হত্যাসহ বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে- এমন তথ্য দিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র পদে কর্মরত থাকলে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন, এমন কথা তারাও শুনেছেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে রাসিক দফতরে এসে পৌঁছায়নি। চিঠি না আসা পর্যন্ত সত্যতা পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৫
এসএস/এইচএ