ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

নীতিনির্ধারকরাই জানেন না বিএনপির খবর!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
নীতিনির্ধারকরাই জানেন না বিএনপির খবর!

ঢাকা: দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধাণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই জানেন না বিএনপির খবর। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগা-গোড়া অন্ধকারে থাকছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।


 
স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্য ও দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
 
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন জনসভায় যোগ দিতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন কি না? বিশ্ব ইজতেমা ও এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো কি না? ১৮ জানুয়ারির পর স্বেচ্ছায় ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া কবে নাগাদ বাসায় ফিরবেন? সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না? অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কবে নাগাদ প্রত্যাহার হচ্ছে? এবং ‘নিস্ফল’ আন্দোলনের পর ‘নিস্তেজ’ বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে; তা জানতে গত চার মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত ১০ জন সদস্য’র সঙ্গে একাধিকবার কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
 
কারাগারের বাইরে থাকা শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে যখনই কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে বেশির ভাগ সময়-ই তারা বলেছেন- ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না’।
 
কখনো কখনো দলীয় কর্মসূচি বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থায়ী কমিটির এসব সদস্য।
 
অনির্দিষ্টকালের অবরোধ আর কতদিন চলবে সে ব্যাপারে জানতে গত ১৬ এপ্রিল ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ফোন দিলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অবরোধের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকার আমার নেই।
 
একই বিষয়ে ওইদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমি অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
 
এর একদিন পর ১৮ এপ্রিল তাবিথ আউয়ালের নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত সমন্বয় কমিটিতে মাহি বি চৌধুরীর নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারব না।
 
কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ তাবিথ আউয়াল এবং মির্জা আব্বাসের জন্য ভোট চাইতে খালেদা জিয়ার মাঠে নামার ব্যাপারে জানতে চাইলে ২৩ এপ্রিল বাংলানিউজকে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি কিছু জানি না।  
 
সিটি নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলনে যাবে কি না জানতে চাইলে ২৯ এপ্রিল ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দল।  
 
এর আগে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় বের হচ্ছেন কি না তা জানতে চাইলে ১৯ এপ্রিল স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি কিছু জানি না। এটা ম্যাডামের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
 
এরও আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না তা জানতে চাইলে গত ১২ মার্চ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এম কে আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর ম্যাডাম এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
 
সূত্র জানায়, দলীয় সিদ্ধান্তের অগ্রিম খবর মিডিয়ার কাছে ফাঁস না করার চর্চা থেকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন-এমনটি নয়। আদতে দলের অনেক কিছুই এখন জানানো হয় না তাদেরকে।
 
বিশ্ব ইজতেমার মধ্যে হরতাল-অবরোধ, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে তা চালিয়ে যাওয়া, আবার এ লেভেল-ওলেভেল পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখা, শেখ হাসিনাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দরজা থেকে ফেরত পাঠানো, আন্দোলন থেকে ইউটার্ন করে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আবার ভোটের দিন মাঝপথে এসে ভোট বর্জনের মতো ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করে হয়নি। আশপাশে থাকা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শেই এ সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
 
তবে এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও পদ হারানোর ভয়ে এবং দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় মুখ খুলতে চান না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
 
সূত্র জানায়, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় থাকা এসব নেতা এখন খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
 
স্থায়ী কমিটির ১৯ জন্য সদস্য’র মধ্যে নড়ে চড়ে বেড়াতে পারেন এমন সদস্য সংখ্যা এখন ১০। বাকি ৯ জনের মধ্যে ১ জন মারা গেছেন, ১ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে কারাবাসে, ১ জন বিদেশে চিকিৎসাধীন, ২ জন কারাগারে, ৩ জন অসুস্থ। অপরজন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, মে ৬,২০১৫
এজেড/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।