ঢাকা: আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার।
গত পাঁচ জানুয়ারি পরবর্তী তিন মাস ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতাল যে সব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরকারে ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তারা জানান, গত তিন মাসে আন্দোলনের নামে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলো না। এসব নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এসএসসি পরীক্ষা, জাতীয় দিবস, ধর্মীয় অনুষ্ঠান- সবকিছুকে উপক্ষো করে আন্দোলন চালাতে খালেদা জিয়া মরিয়া হয়ে ওঠেন। টানা কর্মসূচি দিয়ে তারা সহিংসতা চালিয়েছেন, নিদ্বির্ধায় মানুষ হত্যা করেছেন। এ বিষয়গুলোকে সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এ ধরণের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ কারণেই রাজনীতির নামে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের জন্য সাত বিভাগে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে।
এদিকে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তিনি দোষী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নীতিনির্ধারক ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
এ মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বংলানিউজকে বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। আইনানুযায়ী যেটা হয় সেটা হবে। খালেদা জিয়া তো আর আইনের ঊর্ধ্বে নন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও একই ধরনের সহিংসতা ঘটিয়েছিলো। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হলে আবারও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ২৫ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি চলাকালে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। বাস-ট্রেনে আগুনসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
চলতি বছরের পাঁচ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ও হরতাল শুরু করে ২০ দলীয় জোট। তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ অবরোধ ও হরতালেও ব্যাপক সহিংসতা চালানো হয়। এতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, নির্বাচনের পর সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু ঘটনার তদন্ত, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে ও তাদের বিচারের আওতায় আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওই সময় যে মামলাগুলো হয়েছিলো সেগুলোরও তেমন অগ্রগতি ছিলো না।
তাদের মতে, ২০১৩ সালের সহিসংতার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে আবার সহিংসতার ঘটনা ঘটতো না। ওই সময় ছাড় দেওয়া ছিলো সরকারের বড় ভুল। বিষয়টিকে অনুধাবন করেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
এদিকে খালেদা জিয়াসহ সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সদস্যরা। সংসদের গত শীতকালীন অধিবেশনেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
২০১৩ সালের সহিংসতার ঘটনায় যে সব মামলা হয়েছিলো তার তদন্ত ও বিচারের ধীরগতি নিয়েও সংসদ সদস্যদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ অধিবেশনে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারেরও দাবি জানানো হয়।
সংসদের ভেতরে প্রশ্নোত্তর পর্বে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন, সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে সহিংসতা চালানো হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল আইনি প্রক্রিয়ার বাইরের কিছু না। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যতয় ঘটবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, ০৭ মে, ২০১৫
এসকে/আরএম