ঢাকা: ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে আরেকবার প্রমাণ হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ‘ভোটাধিকার, নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ওই সভায় এ মন্তব্য করেন তারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভার শুরুতে পার্টির পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী বহ্নিশিখা জামালী। সভায় বক্তব্য রাখেন সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক-লেখক সোহরাব হোসেন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল মজুমদার, আবু সাইদ খান, কাজল ঘোষ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, অ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, অ্যাড. মোস্তফা আমিন, অ্যাড. তাসমিন রানা, ঢাকা সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী জোনায়েদ সাকি, বজলুর রশীদ ফিরোজ ও কাফি রতন প্রমুখ।
সভায় আলোচকরা বলেন, জনগণের ভোটাধিকার এখন এক গুরুতর হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভোটাধিকার রক্ষা করাই এখন গণতন্ত্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ভোটের অধিকার ছাড়াই ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে। অবাধ ও মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনগণের নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীককে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে, আর অন্যদিকে ছলে বলে কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে। নিকট অতীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ধারাবাহিকতায় গত ২৮ এপ্রিলের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবার তা প্রমাণিত হল।
বক্তারা বলেন, ভোটাধিকার ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতীক। তার এ অধিকার যখন অস্বীকৃত হয়, ছিনতাই হয়ে যায়, তখন তার কষ্ট, রক্তক্ষরণ আর সম্মানহানির সীমা থাকে না। তারা প্রয়োজনে একবেলা না খেয়ে থাকবেন, কিন্তু ভোটের অধিকার ছাড়তে চাইবেন না।
তারা বলেন, ২৮ এপ্রিল তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে নষ্ট করে নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব, ক্ষমতা, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতাকে পুরোপুরি ভূলুন্ঠিত করেছে। জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে ভোটারদেরকে মারাত্মকভাবে অসম্মান করেছে। বিগত দিনের আজিজ কমিশনকেও তারা লজ্জা দিয়েছে। ২৮ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে ভোট জালিয়াতির শত শত ঘটনা ঘটলেও মুখ রক্ষার জন্যেও তারা সেসব আমলে নেয়নি। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে পাড়ার কোনো ক্লাবের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন।
২৮ এপ্রিলের মতো এমন নির্বাচন করার দায়ে তদন্তপূর্বক নির্বাচন কমিশনের বিচার হওয়া উচিত এবং কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে বলে মনে করেন তারা।
বক্তারা বলেন, বিদ্যমান বশংবদ নির্বাচন কমিশন এবং অসম, অকার্যকরি ও ‘ম্যানিপুলেটেড’ নির্বাচনী ব্যবস্থায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও ভোটাধিকার রক্ষার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনেও যে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অবকাশ নেই ২৮ এপ্রিল তা আরেকবার প্রমাণিত হল।
আলোচকরা বলেন, সরকারের রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার যে সংকট রয়েছে ২৮ এপ্রিল অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। সরকার যে সুযোগ গ্রহণ করেনি। যেকোনোভাবে সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে গিয়ে সমগ্র নির্বাচনকেই তারা নষ্ট করেছে এবং নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয় ঘটিয়েছে। অথচ ‘ভোট ও ভাতে’র অধিকারের কথা বলেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল।
বক্তারা দেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার রক্ষা ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ও দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৫
এসইউজে/এসএ/এএসআর