ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ভেতরে-বাইরে তালা, তারপরও চার্জশিট’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৫
‘ভেতরে-বাইরে তালা, তারপরও চার্জশিট’ সংগৃহীত

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন ভেতরে তালা, বাইরে তালা, বালু ও আবর্জনার ট্রাক দিয়ে এই (গুলশান) কার্যালয়ে সরকার আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আমি বের হলাম কীভাবে? কীভাবেই রাস্তায় গিয়ে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করলাম? অথচ আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

এই সরকার হলো সন্ত্রাসী, মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ ও অপদার্থ সরকার।

শনিবার (০৯ মে) রাতে রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরাম ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের নব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি ভারতের লোকসভায় ‘বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমা চুক্তি’ বিল পাস হওয়ায় মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে ২৩ জানুয়ারি কাঁচপুরে বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের একটি মামলায় নিজের নামে চার্জশিট দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্রলীগ পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে।

বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা পেট্রোলবোমার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, এ কাজ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা করেনি। এ ধরনের ঘটনার অতীত রেকর্ড আমাদের নেই। তাদের (আওয়ামী লীগ) আছে। তারাই এ কাজ করেছে। সব প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।

বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমা চুক্তি:

‘বিএনপি সবসময় ভারতের বিরোধিতা করে, ‘স্থলসীমা চুক্তি বিল পাস হওয়ায় এখন তারা ভারতের দালালি করছে’-প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, আমরা কখনো ভারতের দালালি করি না। ভারতের দালালি করে আওয়ামী লীগ। দালালি করেও তারা কিছু আনতে পারে না।

এর আগের তারা কংগ্রেস সরকারের দালালি করেছে, কিন্তু কিছু আনতে পারেনি। বরং বাংলাদেশ থেকে তারা অনেক কিছু নিয়ে গেছে। এবার মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য স্থলসীমা চুক্তি বিল পাস করেছে। আমরা মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

খালেদা জিয়া বলেন, নরেন্দ্র মোদি পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, তিনি কোনো দল বা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চান না। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। তার এই অবস্থানের প্রতিও আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

সিটি নির্বাচন:

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি নয়, রীতিমতো ভোট ডাকাতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের কোনো এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। মারধর দিয়ে বের করে দিয়েছে। ওই দিন শুধু ভোট জালিয়াতি হয়নি, রীতিমতো ভোট ডাকাতি হয়েছে।

তারপরও মানুষ আমাদের কী পরিমাণ সমর্থন দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে তা দেশবাসী দেখেছেন। এর আগের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তারা (আওয়ামী লীগ) ভোট জালিয়াতি করেছে। তারপরও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে-বলেন খালেদা জিয়া।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবসময় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন দাবি করে আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বার অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ঢাকা ট্যাক্সসেস বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বিধায় বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থীরা যেতো। কারণ, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেয়।

দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে:

সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, তাদের আর কোনো জন সমর্থন নেই। তারা জগণের ভোটে নির্বাচিতও হয়নি। এ কারণে তারা এখন জনগণকে ভয় পায়, নির্বাচনকে ভয় পায়। তাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে দেশটা এখন পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে না দিলে পরিণতি ভালো হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, সালাহউদ্দিনকে র‌্যাব-ই তুলে নিয়ে গেছে। তিনি এখনো র‌্যাবের কাছে আছেন। আমাদের কাছে এর তথ্য-প্রমাণও আছে। সুতরাং শিগগিরই সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দেন, নইলে পরিণতি ভালো হবে না।

দল পুনর্গঠন:

দল পুনর্গঠনের আভাস দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আমাদের কমিটির বয়স অনেক দিন হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই দল পুনর্গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। আপনারা যারা সৎ এবং যোগ্য, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি যাদের আস্থা ও ভালোবাসা আছে, তাদেরকে সেন্ট্রাল কমিটিতে আনার চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে। আপনারা ঠিক মতো কাজ করে যান। সবাই ঐক্যবদ্ধ হউন। তাহলে কেউ আপনাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

মতবিনিয় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, বিএনপির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রাই চৌধুরী, ঢাকা ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নব নির্বাচিত সভাপতি মো. মাজম আলী খান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর উল্লাহ, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৫/আপডেট: ২৩৫৮ ঘণ্টা
এজেড/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।