ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাদের ভাগ্য রাষ্ট্রপতির হাতে

সাখাওয়াত আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাদের ভাগ্য রাষ্ট্রপতির হাতে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্রজ্যোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনকের আজীবন বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে শেষসিদ্ধান্ত দিতে পারবেন কেবল বুয়েটের চ্যান্সেলর এবং রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষবর্ষের এ দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসহ সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত এবং তাদের বহিষ্কারাদেশের সমস্ত কাগজ গত ৬ মে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রপতিই এখন সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।

বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক খালেদা ইকরাম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের সমস্ত কাগজপত্রসহ গত ১৮ ও ১৯ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন বা আমাদেরকে যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে।

এদিকে, এ দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনের বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থীর পৃথক চারটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১১ মে) এ আদেশ দেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

অন্য দুই শিক্ষার্থী হচ্ছেন প্রতীক ও রাতুল। এদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে বহিষ্কারাদেশ স্থগিতে হাইকোর্টের নির্দেশনার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বুয়েট ভিসি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানিনা। কারণ, আমার কাছে কোনো কাগজ আসেনি।

তবে সোমবার সকাল ১১টার দিকে বহিষ্কৃত ওই  চার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উকিল নোটিস পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ চারজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্রলীগ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

সর্বশেষ, সোমবার দিনব্যাপী বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে সংহতি সমাবেশ করে কেন্দ্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানান, বুয়েট শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশসহ, সরকার সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠন।

সংহতি সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে এ দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বুয়েটের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ‘বিতর্কিত’ বুয়েট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার, বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, জামায়াতপন্থী কয়েকজন শিক্ষককে বুয়েট থেকে বহিষ্কার, বুয়েট উপাচার্যসহ প্রশাসনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং দ্বীপ হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ।

সোমবার সন্ধ্যায় এ দাবি নিয়ে ভিসির সঙ্গে দেখা করেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, আবু হানিফ, যুগ্মসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, আবদুর রহমান জীবন, শারমিন সুলতানা লিলি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম।

প্র্রতিনিধি দলে থাকা জয়দেব নন্দী বাংলানিউজকে বলেন, ভিসির সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের ‘পজিটিভ’ (ইতিবাচক) আশ্বাস দিয়েছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে ভিসি খালেদা ইকরাম বাংলানিউজকে বলেন, তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে সেটা খুব একটা প্লেজেন্ট (সুখকর) সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) ছিল না। কারণ, বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তাদের কথা বলা ঠিক নয়। তবে, যা হোক তাদের দাবি আমি রেখে দিয়েছি।

সোমবারও বুয়েট সিন্ডিকেটের বৈঠক ছিল। তবে এ বৈঠকে চার শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি বলে জানান ভিসি।
 
এদিকে, বুয়েট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে।

গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়েজউল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম (মামলা নং ১১)।

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক পেজ ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’য় এক ছাত্র জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে ওই শিক্ষক মন্তব্য করেন। বর্তমান সরকারের সমলোচনাসহ হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার করে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর মন্তব্য করেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভাগীয় অফিসে গিয়ে গত ১২ এপ্রিল বুয়েটের সিভিল ইনঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে ‘হেনস্থা’ করেন।

এ ঘটনায় বুয়েট শিক্ষক সমিতির আহ্বানে ক্যাম্পাসে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা।
 
গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির এক জরুরি সভায় ওই চার ছাত্রের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল সোমবার রাতে চিঠির মাধ্যমে বহিষ্কারের বিষয়টি চার ছাত্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
এসএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।