ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

জামায়াত নিষিদ্ধে ধীরে চলো নীতি

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
জামায়াত নিষিদ্ধে ধীরে চলো নীতি

ঢাকা : জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে ধীরে চলা নীতিতে এগুচ্ছে সরকার। আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটিকে বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রক্রিয়াটি ঝুলে রয়েছে।

পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে নিষিদ্ধের বিষয়টিও সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ে দুই বছর আগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এর পর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের করা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে দুই ধরনের আইনি প্রক্রিয়া হাতে রেখেছে সরকার। একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। অপরটি, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টির আপিল নিষ্পত্তির পর দলটির রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা। তবে এই প্রক্রিয়াগুলোর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বও রয়েছে। এ কারণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোতে কৌশলগত ধীরগতি রয়েছে। আবার এটি শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ জড়িত রয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই বিষয়টি ঝুলে আছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপির সংশ্লিষ্টতা থেকে জামায়াতকে সরিয়ে এনে স্বতন্ত্রভাবে রাখা যায় কিনা সে ধরনের একটি কৌশলও সরকারের রয়েছে। এ বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।    

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দিক থেকে যুদ্ধাপরাধী এবং ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি এবং সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদি তৎপরতার দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে। এই দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে জোরালো আন্দোলন চলে আসছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে জামায়াতকেও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের শুরুতে সরকার জামায়াতের বিচারের ব্যাপারে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এ সংক্রান্ত একটি বিল আইনমন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এই বিলটি সংসদে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে মন্ত্রিসভায় বিলটি কবে তোলা হবে হবে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিলটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে। যদিও গত ফেব্রয়ারি থেকেই আইনমন্ত্রী বলে আসছেন, শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত বিলটি তোলা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলনিউজকে বলেন, জামায়াতের বিচার সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী বিলটি আমরা তৈরি করে অনেক আগেই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি। বিলটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার ব্যাপারে আমি তাগিদও দিয়েছি। এখন কবে এটা উঠবে এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারি না।

১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যে অপরাধ করেছে তার বিচারেই এই দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই অপরাধে জামায়াত নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মুত্যুদণ্ড হয়েছে ও হচ্ছে। এই বিচারে ৭১ এর কর্মকাণেই জাময়াতকেও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আদালত।

১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংগঠনের বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু শাস্তি কি হবে সে ব্যাপারে বলা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে। বিদ্যমান আইনেও জামায়াতের বিচার করা সম্ভব বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। এরপরও আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, যে আইন আছে তা সংগঠন হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য তা যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেই জামায়াতের বিচার এবং সাজা দেয়া সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের দল নাৎসি পার্টিও বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়েছে। একই অপরাধ করেছে জামায়াতে ইসলাম। এ অপরাধের বিচার হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে ইতোমধ্যেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হলে শুধু নির্বাচনেই অযোগ্য হয় না, রাজনৈতিক তৎপরতাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বেআইনি দলে পরিণত হয়। সরকার সে বিষয়টির অপেক্ষায় রয়েছে।

জামায়াতের নিবন্ধনের বিরুদ্ধে তরিকত ফেযারেশনের নেতারা ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। এই রিটের উপর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।   এর পরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।

আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এটি সর্বোচ্চ আদালতের বিষয়। এ বিষয়ে আমার বলার কিছুই নেই।

তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শরিক আহমেদ বাংলানিউজকে এ বিষয়ে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। কোনো দলের যদি নিবন্ধন না থাকে তাহলে সেটা শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্যই না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সে আর চালাতে পারে না। এই রায়ের পর জামায়াতের তৎপরতা বন্ধ করে দেয়া যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
এসকে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।