ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

আদালত অবমাননা

শিবিরের দুই নেতাকে সতর্ক করে ক্ষমা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
শিবিরের দুই নেতাকে সতর্ক করে ক্ষমা

ঢাকা: ট্রাইব্যুনালের রায় সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননা করার অভিযোগে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমানকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।



মঙ্গলবার (৩০ জুন) এ ব্যাপারে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। আদেশে ভবিষ্যতে ট্রাইব্যুনাল ও তার বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধরনের বিরুপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে শিবির নেতাদের সতর্ক করে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
   
গত ৪ মে জারি করা রুলে শিবিরের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। গত ১৪ জুন তাদের পক্ষে রুলের জবাব দাখিল করেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মশিউজ্জামান। এরপর শুনানিতে তাদের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চান অপর আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মুনির।

একই অভিযোগসহ রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় গত ১২ জানুয়ারি শো’কজ (কারণ দর্শাও) নোটিশ জারি করা হয়েছিল শিবিরের দুই নেতাসহ জামায়াত নেতাদের ‍আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এবং তিন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধেও। বিভিন্ন সময়ে ওই ছয়জন এ নোটিশের জবাব দেন। জবাবে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে এবং ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তিন জামায়াত নেতাকে গত ৪ মে ক্ষমা করে দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে দেওয়া হয়।

ক্ষমাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান।

তবে দুই শিবির নেতার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়নি উল্লেখ করে ওইদিন (৪ মে) তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়।

গত ১ জানুয়ারি সংগঠন হিসেবে জামায়াত এবং ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ৫ জানুয়ারি এ অভিযোগের শুনানি নিয়ে ১২ জানুয়ারির আদেশে সংগঠন হিসেবে জামায়াত বাদে বাকি ছয়জনকে শো’কজ করেন ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দু’দিনের হরতাল ডাকে জামায়াত। বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরুপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা।

অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।

আজহারের এই আইনজীবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার ও আবার কেউ দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি।

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলা হতো তাতে সুবিচার হতো।
 
এসব সাক্ষ্য-প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড হওয়া দূরের কথা, এসব অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনের জরিমানা হওয়ার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।