ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেটে ছাত্রদলের কমিটি বাণিজ্য!

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
সিলেটে ছাত্রদলের কমিটি বাণিজ্য!

সিলেট: আন্দোলনে দেখা মিলেনি রাজপথে। ধরপাকড়ের ভয়ে ছিলেন আত্মগোপনে।

কমিটির পদধারী সেসব ছাত্রদল নেতারা এবার প্রকাশ্যে ফিরে এসেছেন। আর ফিরেই নতুন কলঙ্ক রচিত করে চলেছেন তারা।

সংগঠনকে গোচানোর নামে তাদের বিরুদ্ধে ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতারা। এমনকি এসব কমিটি গঠন করতে গিয়ে দলের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করছেন না তারা।

তাছাড়া আর্থিক সুবিধা নিয়ে গঠিত ইউনিট কমিটিতে স্থান দিয়েছেন অকর্মাদের। আর দলের দুর্দিনে ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুসারে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে সর্বোচ্চ সাত জনকে রাখার কথা। কিন্তু কোনো কোনো ইউনিট কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কসহ ২৪ জন আবার কোনোটিতে ১৩ জনকে কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা ছাত্রদল।

শুধু তাই নয়- জকিগঞ্জ উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ককে ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ দিয়ে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অনুমোদিত কমিটির নবীন সদস্যদের যুগ্ম আহ্বায়ক পদেও পদায়ন করার অভিযোগ জেলা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনায় জেলা ছাত্রদলের কমিটির নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে কমিটি গঠনের পর থেকে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ-ঈদকে সামনে রেখে কমিটি গঠনের নামে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ২০ থেকে ৫০ হাজার আবার লাখ-দেড়লাখ টাকা নিয়েও কমিটি দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ করেন জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল নেতা ইসমাইল হোসেন সেলিম।

তিনি বলেন, উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পরও আরো চারজনকে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সামদুদ্দোহাকে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক করে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা ছাত্রদল নেতারা। আর এর সব কিছু হয়েছে টাকার বিনিময়ে।

এছাড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা হওয়ার পরও আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরাকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ত্যাগী নেতাদের। যারা ছাত্রদলকে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

ইসমাইল হোসেন সেলিমের মতো আরও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কমিটি গঠন নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিয়ানীবাজার ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কসহ কমিটিতে ২৪ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দেওয়া হলেও কমিটি অনুমোদনের পর সন্তুষ্ট করার জন্য আরো চারজনকে এ পদে পদায়ন করা হয়েছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল আহান খান জামাল বাংলানিউজকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুগ্ম আহ্বায়ক পদে তিন জন বা সর্বোচ্চ সাত জন রাখার বিধান রয়েছে। এর বেশি হলে তা হবে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত।
 
চাকসু’র সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মামুনুর রশিদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘৯০তে ছাত্র রাজনীতি করেছি। আর এই বয়সে এসে কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রদলের কর্মকান্ড দেখে লজ্জা লাগছে। কমিটি গঠনের নামে তারা রীতিমতো ব্যবসা জুড়ে দিয়েছে।  

কমিটি হওয়ার খবরে সবাই তৎপর। যদিও জেলা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদ ২ বছর হলেও প্রায় অর্ধেক সময় পার করেছে। পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কোনো লক্ষণই নেই। এক অর্থে ব্যর্থ।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটের ১২টি উপজেলায় ৩২টি ইউনিট কমিটির মধ্যে এ পর্যন্ত ৯টি ইউনিটের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে কমিটিতে সর্বোচ্চ ৭জন যুগ্ম আহবায়ক দেওয়ার বিধিবিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে অনুসরণ করেই এসব আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি গঠনে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করছেন অনেকে। মূলত কমিটিতে পরিক্ষীত নেতাদেরই স্থান দেওয়া হয়েছে।

তবে জকিগঞ্জ পৌর কমিটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সামদুদ্দোহাকে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক করে কমিটি অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তদন্তে সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এনইউ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।