ঢাকা: বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের জমি কম দামে বিক্রি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১ জুলাই) কমিশন এ মামলার অনুমোদন দেয়।
মামলা অনুমোদনের বিষয়ে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
মামলার সুপারিশ করা দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের ৩টি গুদামসহ ০.৯৮ একর জমি মাত্র ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। নেত্রকোনা জেলা শহরের সাতপাই মৌজায় সিএস খতিয়ান নং: ১৬,১৭,২০; এসএ খতিয়ান নং: ১; সিএস দাগ নং: ১৬০৬, ১৬০৭, ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৭৭১ ও ১৭৭৪ এবং এসএ দাগ নং: ৪৫৭৫-ভুক্ত ০.৯৮ একর জমির অবস্থান। এটির মালিক বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন। ২০১২ সালের ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
এ বিষয়ে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাল কমল চন্দ্রকে। তিনি দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত বছর ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনে।
প্রতিবেদনে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্রিত জমিটি তৎকালীন ‘জুট বোর্ড অব পাকিস্তান’ পাটগুদাম নির্মাণ করার জন্য অধিগ্রহণ করে। ৪৫৭৫ দাগের ১.০১ একর সম্পত্তি সংস্থার। তবে ০.০৩ একর সম্পত্তি রাস্তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি সাবেক জুট বোর্ড বর্তমানে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের (বিজেসি) দখলীয় সম্পত্তি। মোট জমির পরিমাণ ০.৯৮ একর। ওই জমিসহ তিনটি গুদাম মো. তারেক সালমান এবং সুধেন্দু শেখর রায়ের কাছে বার্ষিক ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া ছিল। তারা যৌথভাবে এ সম্পত্তি কেনার জন্য তিনটি গুদামের মূল্যায়িত দর ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৬৭৬ টাকার অধিক মূল্যে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৯ টাকায় ক্রয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত দেন যে, বিক্রিতে সময়ক্ষেপণের ফলে ০.৮৫ একর জমি বেদখল হলে অবশিষ্ট জমি বেদখল হতে সময় লাগবে না। যে তিনটি গুদাম ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে তদারকির অভাবে একসময় ভাড়াটিয়া যে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে এগুলোর মালিক বনে যাবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভাড়াটিয়াই উল্লিখিত ০.৯৮ একর জমি ক্রয় করতে চাইলে যৌক্তিক কারণে ভাড়াটিয়াই ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন। ২০০৮ সালের ১৮ জুন ‘বিজেসি’র সংশোধিত সম্পত্তি বিক্রির নীতিমালায় বিজেসি’র সব সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে তার সপক্ষে আরও উল্লেখ করেন, এ ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হল, ভাড়াটিয়াদের কাছে তাদের প্রস্তাবে সম্পত্তি বিক্রি করা হবে কি-না- সে সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে টেন্ডারে যেতে হবে। টেন্ডার হলেই যে, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তা ভাবার কারণ নেই। অতএব, ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে তা জেনে বুঝেই ০৭/০৭/১৯৯৪ সালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক মূল্যায়িত ওই জমির মূল্যের ৩ গুণ ধার্য করে আবেদনকারীদের কাছে ০.৯৮ একর জমি বিক্রয়মূলে হস্তান্তর করার নিমিত্তে আদেশ প্রদান করেন লতিফ সিদ্দিকী। ওই সময় এ জমির মূল্য ধরা হয় ৫১ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৬ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৪ সালে মূল্যায়িত সম্পত্তির তিন গুণ মূল্যে জমিটি হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়ে এবং এ বিষয়ে প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমে স্বীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১. ২০১৫
এডিএ/এএসআর