ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ বিকল্পধারাকে নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
জোটের বাইরে থাকা এই দলটি না ঢুকছে জোটে, না ছাড়ছে পিছু।
বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াতের কারণে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে ঢুকতে আপত্তি বিকল্পধারার। ফলে গত কয়েক বছর ধরে চলমান সংকট উত্তরণে পাশে দাঁড়ানোর জন্য খালেদা জিয়ার বার বার আহ্বানেও দল নিয়ে ২০ দলীয় জোটে ভেড়েননি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
বিষয়টি অপমানজনক হলেও দল ও জোট নিয়ে চরম সংকটে পড়া খালেদা জিয়া বরাবরই ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি চৌধুরী) এবং তার ছেলে মাহি বি চৌধুরীকে যথাযথ মূল্যায়ন করে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দল এবং জোটের বাইরে থেকে ডেকে এনে বি চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করেন খালেদা জিয়া। এই সুযোগে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ভালোই নসিহত করেন।
বিষয়টি বিএনপি এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নেতাদের অনেকেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মনে করলেও খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হবেন জেনে প্রকাশ্যে কথা বলেননি কেউ।
অবশ্য এ নিয়ে জোটে থাকা কয়েকটি শরিক দলের অবস্থান কিছুটা নিরপেক্ষ ছিল। তারা বলছে, জোট নেত্রী খালেদা জিয়া যখন বিকল্পধারাকে ‘সঙ্গে নিয়ে চলার নীতি’ অবলম্বন করছেন, অন্যদের তখন নীরব থাকা উচিত।
কিন্তু গত ৫ জুলাই বিকল্পধারার ইফতার পার্টিতে খালেদা জিয়া ও তার জোটের নেতারা যথাযথভাবে মূল্যায়িত না হওয়া চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। বিষয়টিকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান’ করা হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ওই ইফতার পার্টিতে খালেদা জিয়াকে প্রধান অতিথি করেন বি চৌধুরী।
ইফতারের একদিন আগে গুলশানের বাসায় গিয়ে ইফতারে শরিক হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে আসেন বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী।
কিন্তু নির্ধারিত দিনে ইফতার ভেন্যুতে খালেদা জিয়ার জন্য মঞ্চ তৈরি করেননি বি চৌধুরী। এমনকি ফ্লোরওয়াইজ টেবিল সিটিংয়ে খালেদা জিয়ার জন্য রাখা হয়নি বিশেষ চেয়ার।
অধিকন্তু গুলশান কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার জন্য চেয়ার নিয়ে গেলেও সেটি নিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারদের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন মাহি বি চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত গুলশান কার্যালয় থেকে নেওয়া চেয়ারে বসেই ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
শুধু তাই নয়, ইফতারের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য পর্বে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নামের আগে, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’, ‘প্রবীণ রাজনীতিক’, ‘বিকল্পধারার চেয়ারম্যান’ বিশেষণগুলো যোগ করা হলেও খালেদা জিয়ার বেলায় শুধু ‘বেগম খালেদা জিয়া’ বলা হয়।
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণার সময় ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’, ‘২০ দলীয় জোট নেত্রী’, বিএনপির চেয়ারপারসন’-বিশেষণগুলো উল্লেখ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অনুষ্ঠানটি কোনো রাজনৈতিক ইভেন্ট ছিলো না। সেটি ছিলো স্রেফ ইফতার পার্টি। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য্য বজায় রেখে রমজানের শিক্ষা অনুযায়ী সবার জন্য সমান ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, জোট নেত্রীকে প্রধান অতিথি করা হলেও ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ দলকেই বিকল্পধারার ইফতার পার্টিতে দেখা যায়নি। কেবল ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি ওই ইফতার মাহফিলে শরিক হয়।
জানা গেছে, বাকি দলগুলোকে ইফতার পার্টিতে দাওয়াত-ই দেয়নি বিকল্পধারা। আবার যেসব দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে সেখানেও কেবল দলীয় প্রধানকে কার্ড পাঠানো হয়েছে। মহাসচিব-সাধারণ সম্পাদককে হিসাবের খাতায় রাখা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে এক ধরনের অপমানবোধ ও অস্বস্তি কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
কারণ সারা বছর একসঙ্গে বসার সুযোগ না পেলেও রমজানের ইফতার আয়োজনে একসঙ্গে হওয়ার সুযোগ পায় জোট নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদেরকে তারা (বিকল্পধারা) হয়তো নিম্নবর্গের মনে করেন, তাই দাওয়াত দেননি। অথচ বি চৌধুরী সব সময় ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন। আর যাই হোক এ ধরনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড লোকদের সঙ্গে আমরা রাজনৈতিক ঐক্য চাই না।
এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জোট নেত্রীকে তারা দাওয়াত দিতে পারেন, অথচ জোট শরিকদের দিতে পারেন না। এটা তাদের দীনতা। এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে এসব ঘটনা জোটের মধ্যে অস্বস্তির জন্ম দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এজেড/এসআর