ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যাচার বন্ধ করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন দফতরবিহীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নিন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে আসুন। আপনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে নতুন কোনো সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। অশুভ শক্তির হাতে দেশ চলে যাবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া প্রায় প্রতিদিনই ইফতার পার্টিতে মিথ্যাচার করছেন। আমি রোজা রেখেছি, মিথ্যা কথা বলবো? রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে রোজা হয় না? দয়া করে রোজা রেখে মিথ্যাচার বন্ধ করুন। জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করুন। রাজনীতিতে জ্বালাও-পোড়াও করলে দেশের ক্ষতি হবে। দেশে সংঘাত সৃষ্টি করলে ফল শুভ হবে না। নির্বাচনে আসলেন না। সংঘাত সৃষ্টি করলেন, বাস পোড়ালেন, ট্রেন পোড়ালেন, মানুষ মারলেন। এটা গুরুতর অন্যায়। এই পাপের প্রায়শ্চিত্য বাংলার মাটিতে হবেই।
সৈয়দ আশরাফ বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ভাসমান হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া কথায় কথায় মিথ্যাচার করছেন। গোয়েবলসীয় থিউরিতে একটা মিথ্যা বারবার বললে সত্যের মতো শোনায়। কিন্তু মিথ্যা মিথ্যাই, সত্য সত্যই। তিনি একবার মিথ্যা বলে পার পেতে পারেন। কিন্তু বারবার মিথ্যা বলে পার পাবেন না। খালেদা জিয়া রোজ রাখেন, একজন মুসলমান রোজা রেখে মিথ্যাচার করতে পারেন না। রোজা রেখে মিথ্যাচার করা হারাম। আল্লাহ রোজা কবুল করেন না।
দফতরবিহীন মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও নির্বাচন বর্জন করেনি। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ এর সামরিক স্বৈরশাসনের সময় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। জনগণের কাছে গিয়ে বলতে হবে তাদের ভোটাধিকার নেই। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ফাতেমা জিন্নাকে সমর্থন দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনে গিয়েছে। নির্বাচনে গেলেই বিজয়ী হতে হবে এর গ্যারান্টি নেই। এ সিদ্ধান্ত নেবেন দেশের জনগণ। তারা আওয়ামী লীগকেও ভোট দিতে পারেন, বিএনপিকেও ভোট দিতে পারেন।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যুবলীগ অত্যন্ত দক্ষ সংগঠন। আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে যুবলীগ। যুবলীগের জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। এ কারণেই আমরা বারবার যুবলীগের সভায় আসি।
যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত। বক্তব্য রাখেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ। এতে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহাবুবুর রহমান হিরন, আতাউর রহমান আতা, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন, ডা. মোকলেসুজ্জামান হিরো, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, যুগ্ম-সম্পাদক মহিউদ্দিন আহাম্মেদ মহি, বাবু সুব্রত পাল, নাসরিন জাহান চৌধুরী শেফালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, আসাদুল হক আসাদ, আজাহার উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যথাক্রমে সভাপতি মাইনুল হেসেন খান নিখিল, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।
এর আগে, বিকেলে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পর সন্ধ্যা ৬টায় এ ইফতার অনুষ্ঠানে আসেন সৈয়দ আশরাফ। এরপর মঞ্চে আসন নেন এবং বক্তৃতা করেন। ইফতার শেষে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভবনে অবস্থিত যুবলীগ কার্যালয়ে যান। সেখানে আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন এবং যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা বারবার তার কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো কথা বলেননি। এমনকি বৃষ্টির মধ্যে নিচে নেমে প্রধান সড়কে এসে সৈয়দ আশরাফ গাড়িতে ওঠার সময়ও সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। সেইসময়ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি দফতরবিহীন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫/আপডেট ২১৪৪ ঘণ্টা
এসকে/এইচএ
** যুবলীগের ইফতারে সৈয়দ আশরাফ