চট্টগ্রাম: মহানগরীর বৌবাজার এলাকায় লিটল স্টার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় অভিভাবকদের জটলা। জটলায় আলোচনার মূল বিষয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
নগরীর মাস্টারপুল এলাকায় খাজা আজমীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ভেতরও টেবিলে টেবিলে চলছে একই আলাপ। ওই হোটেলে বসা সিএনজিচালিত টেক্সিচালক মো. হানিফ এ প্রতিবেদককে বললেন, ‘গরীবের লাইগ্যা যিনি দান, খয়রাত করেন তারে ভোট দিমু না তো আর কারে দিমু। ’
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এভাবেই শেষ মুহূর্তের হিসেব নিকেশ কষছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা। নগরীর চা দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়া, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুলে বাচ্চা আনতে যাওয়া অভিভাবদের মধ্যে পর্যন্ত চলছে নির্বাচন নিয়ে সরব আলোচনা। বিশেষত মেয়র পদে দুজন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ঘিরে চলছে ভোটারদের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
অনেকেই বলছেন, শেষ পর্যন্ত ‘১৭ বছরের উন্নয়ন’ আর ‘ভাল মানুষ’ এ দুটি ইস্যুতেই চলবে জোর লড়াই। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাবের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আগামী ১৭ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলমের সঙ্গে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য সচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনাকারী সামাজিক সংগঠন নাগরিক মৈত্রীর সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এবার ভোটের অংক খুবই জটিল বলে মনে হচ্ছে। এবারের নির্বাচন শুধু নগর উন্নয়নে সীমাবদ্ধ নেই। এর সঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণ আর প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাল, মন্দ গুণাবলী যুক্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় সাড়ে তিন লাখ তরুণ ভোটারের কাছে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু প্রধান্য পাচ্ছে। তবে এসব সমীকরণ শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোটারের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলবে তা-ই দেখার বিষয়। ’
প্রসঙ্গত নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৪ সালে থেকে টানা ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের সমর্থনে এম মনজুর আলমও টানা তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত সর্বাধিকবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ান ইলেভেনের পর মহিউদ্দিন কারাগারে গেলে তিনি টানা দেড় বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে এম মনজুর আলম আওয়ামীলীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন এক প্রশ্নে নগরীর শহীদ মিনার এলাকার ডাব বিক্রেতা শহীদুল উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘নতুন মেয়র এলে কী আমাদের ফুটপাত থেকে তুলে দেবেন?’ পার্শ্ববর্তী এলাকা আমতলার হকার কায়সারেরও একই প্রশ্ন। পাশাপশি তিনি বলেন, ‘মুখের কথার ঠিক থাকে না এরকম মানুষ আমার একদম পছন্দ না। ’
একই প্রশ্নের জবাবে নগরীর হোটেল টাওয়ার ইনের সিকিউরিটি গার্ড মো. ইয়াছিন বলেন, ‘সৎ ও ভাল মানুষ দেখে ভোট দেব। ’
অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ পাশ করে ফেরা তরুণ ও নগরীর রায়হান ফ্যাব্রিক্স নামের একটি পোশাক কারখানার মার্কেটিং হেড শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘বিগত মেয়রের আমলে প্রচুর সমস্যা ছিল। অনেক সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। এসব সমস্যা নিরসনে যে প্রার্থী নিরলস পরিশ্রম করবেন তাকে ভোট দেব। ’
সাংস্কৃতিককর্মী আলাউদ্দিন খোকন বলেন, ‘যাকে ভোট দিলে চট্টগ্রাম সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক নগরী হিসেবে টিকে থাকবে তাকেই সবার ভোট দেয়া উচিৎ। ’
তবে গত তিনদিনে টানা বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা শেষ মুহুর্তে ভোটের সমীকরণে কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন কিছু ভোটার। জলাবদ্ধতা কবলিত পূর্ব বাঁকলিয়া এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘একজন প্রার্থীও বলেননি কীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করবেন। আমরা আর কোনো আশ্বাস চাই না, শুধু এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই। ’
বাংলাদেশ সময় ১৪২৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১০
আরডিজি/এমএমকে/জেএম